রসিদে খাজনা ৪ হাজার, দিতে হল ১৬ হাজার

চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়ার বাসিন্দা প্রবাসী নুরুল ইসলাম। সম্প্রতি ভিটেবাড়ির খাজনা পরিশোধ করতে স্থানীয় ভূমি অফিসে যান তিনি। সরকারি হিসেবে ১ শতক জমিতে ৪৬ বছরের ২ হাজার ৩৮৫ টাকার খাজনা বকেয়া ছিল। কিন্তু বকেয়া পরিশোধের সময় তহশিলদার তাঁর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নেন। এ ছাড়া ৩ শতকের আরেকটি জমিতে ১০ বছরের ১ হাজার ৬৩৮ টাকা খাজনার বিপরীতে ৬ হাজার টাকা দিতে হয়েছে তাঁকে। বুধবার দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে তিনি এ অভিযোগ করেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শাহ আলম বীর উত্তম মিলনায়তনে এ গণশুনানির আয়োজন করে দুদক ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি চট্টগ্রাম।

নুরুল ইসলাম বলেন, গত এপ্রিল ও মে মাসে নগরের বাকলিয়া ভূমি অফিসের তহশিলদার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন সরকারি পাওনার চেয়ে তাঁর কাছে বেশি টাকা দাবি করেন। নইলে তাঁর খাজনা নেবেন না জানান তিনি। এ সময় বাংলা সন ১৩৮৩ থেকে ১৪২৯ পর্যন্ত ২ হাজার ৩৮৫ টাকার রসিদের বিপরীতে ১০ হাজার টাকা নেন। অপর দিকে ১৪১৮ থেকে ১৪২৮ সন পর্যন্ত ১ হাজার ৬৩৮ টাকার বিপরীতে ৬ হাজার টাকা নেন জসীম উদ্দিন। বাধ্য হয়ে তিনি অতিরিক্ত টাকা দেন।

এ সময় তহশিলদার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘বেশি বা কম নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কিছু দালাল এসব করে থাকেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

শুনানিতে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মো. মোজাম্মেল হক খান ভুক্তভোগী নুরুল ইসলামের কাছে প্রশ্ন করেন, বাড়তি টাকা দেওয়ার কোনো তথ্যপ্রমাণ আছে কি না। তখন কোনো প্রমাণ নেই বলে তাঁকে জানানো হয়। এ সময় দুদক কমিশনার বলেন, ঘুষ নেওয়ার সময় সহজে কেউ প্রমাণ রাখেন না। ভুক্তভোগীরা চান তাঁদের কাজটা দ্রুত হয়ে যাক। এ ক্ষেত্রে দুদককে জানিয়ে কৌশলে ফাঁদ পেতে ঘুষের টাকাসহ ধরা যায় দুর্নীতিবাজদের।

যেহেতু তহশিলদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাই এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন দুদক কমিশনার। এ সময় জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে ভূমি অফিসে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।

শুনানি শেষ হওয়ার পর নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আট মাসের ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন। বাধ্য হয়ে ঘুষ দিয়েছেন। ভবিষ্যতে তিনি সতর্কভাবে এগোবেন। কেউ ঘুষ চাইলে উপযুক্ত প্রমাণ রাখবেন।

বুধবার সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হওয়া শুনানি শেষ হয় বেলা সাড়ে তিনটায়। শুনানিতে চট্টগ্রাম বন্দর, ওয়াসা, কাস্টমস, রেল, বিদ্যুৎ, পাসপোর্ট, ভূমি অফিস, ভূমি অধিগ্রহণ শাখাসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রায় ৪৭টি অভিযোগ তুলে ধরেন ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন, দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) এ কে এম সোহেল, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, দুদক চট্টগ্রামের পরিচালক মাহমুদ হাসান ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি চট্টগ্রামের সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী। শুনানিতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান।