মুখের স্বাস্থ্যই শরীরের সুস্থতার চাবিকাঠি

গতকাল সোমবার (২০ মার্চ) ছিল ‘ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ ডে’। মুখের স্বাস্থ্য সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি এবং মানুষের মুখকে সুস্থ রাখতে করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে জানানোই এ দিবসের লক্ষ্য।

‘নিজ মুখের জন্য গর্বিত হও’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও পালন করেছে দিবসটি। মুখের স্বাস্থ্যসচেতনতায় ইউনিলিভার বাংলাদেশের আয়োজনে এবং বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির সহায়তায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন এন্ডোডেন্টিস্টের কিংবদন্তিতুল্য জেমস এল গুটমান। তিনি ‘টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটি কলেজ অব ডেন্টিস্ট্রি’র ইমিরেটাস অধ্যাপক। মুখের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ওপর সারা দিনব্যাপী সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন গুটমান। প্রথম আলোর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে গুটমান জানান, বাংলাদেশে আসতে পেরে তিনি উচ্ছ্বসিত। নিজের দীর্ঘ পেশাগত জীবনের নানা অভিজ্ঞতার পাশাপাশি এই পেশায় যাঁরা আসতে চান, তাঁদের জন্যও বিভিন্ন পরামর্শ দেন গুটমান।

মানুষের মুখের স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতনতা প্রসঙ্গে জেমস এল গুটমান বলেন, ‘মানুষ মুখের মাধ্যমেই হাসে, পারস্পরিক ভাবনা বিনিময় করে। একজন এন্ডোডেন্টিস্ট হিসেবে আমি রোগীকে মুখের স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন করি। প্রবীণ থেকে শিশু—একটি পরিবারের সব সদস্যকে আমরা শেখাই, মুখের স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে শরীর সুস্থ থাকবে। সন্তানেরা তাঁদের মা–বাবাকে এবং মা–বাবা তাঁদের শিশুদের আমাদের কাছে নিয়ে আসেন। আমরা সবাইকে শেখাই, মুখের স্বাস্থ্যই সারা শরীরের সুস্থতার চাবিকাঠি। তাই মুখের যেকোনো সমস্যায় মানুষকে দন্তচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’

নিজের দীর্ঘ চিকিৎসাজীবন নিয়ে গুটমান বলেন, ‘৫০ বছর ধরে আমি এই পেশায় আছি। আমার এই জার্নির প্রধান লক্ষ্য হলো জনগণ ও তাদের চিকিৎসাসেবা।

প্রতিনিয়ত আমি ভেবেছি কী করে নতুন কিছু সৃষ্টি করা যায়, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে কীভাবে রোগীকে ব্যথামুক্ত করতে পারি, মানুষের মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কী করা যায় ইত্যাদি। মানুষের মুখের স্বাস্থ্য খুবই জটিল বিষয়। তাই এই বিষয়ে যত্নশীল হতে হবে। যাঁরা আমাদের কাছে আসেন, তাঁরা শুধু ব্যথা থেকে বাঁচতেই আসেন—বিষয়টা তেমন নয়, সুস্থতার আশায় পরিবার নিয়ে আসেন। ফলে তাঁরা আমাদের বিশ্বাস করেন, ভরসার জায়গা মনে করেন। পেশাজীবনে এটি আমার কাছে বড় ধরনের প্রাপ্তি মনে হয়। তাই দন্তচিকিৎসক হিসেবে আমি মনোযোগ দিয়ে রোগীদের কথা শুনি, সেবা দিই। এটাই পেশাদারত্ব। আমি এটাকে মনেপ্রাণে উপভোগ করি।’

একজন সফল দন্তচিকিৎসক হতে হলে কী কী গুণ থাকা উচিত—এমন প্রশ্নের জবাবে গুটমান জানান, এই পেশায় দক্ষ হতে হলে সবচেয়ে বেশি যা দরকার, সেটা হলো চিকিৎসার প্রতি ব্রত থাকা। শেখার নেশা। নিজেকে উন্নত করতে হবে। একজন চিকিৎসকের হয়তো কোনো দিনের শুরু খারাপভাবে হতে পারে কিন্তু যখন তিনি তাঁর রোগীদের কাছে যাবেন, তখন তাঁকে সেই রোগীর উপযুক্ত সেবাটি দিতে হবে। রোগীর প্রতি আন্তরিক থাকতে হবে। একজন ভালো দন্তচিকিৎসক হতে হলে তাঁর মূল্যবোধ অনেক জরুরি বিষয়। মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ যেকোনো পেশায়ই সফল হতে পারেন।

স্কটল্যান্ডের রয়েল কলেজ অব সার্জনস অব এডিনবার্গের ডেন্টাল সার্জারিতে অনারারি ফেলোশিপ পেয়েছেন জেমস এল গুটমান। ভবিষ্যতে এই ফেলোশিপ যাঁরা পেতে চান কিংবা এই পেশায় তাঁর মতো সফল হতে চান, তাঁদের জন্য পরামর্শ হিসেবে গুটমান বলেন, ‘লোকজন তাঁদের মুখের নানা ধরনের ব্যথা নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। কারও দাঁতের ব্যথা, কারওবা মুখের ভেতরের। আমরা তাঁদের ব্যথা নিরাময়ে কাজ করি। ব্যথার উৎস খুঁজে সে অনুযায়ী সেবা প্রদান করি। মাঝেমধ্যে মুখের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীরা আমাদের কাছে আসেন। কেউ কেউ চিকিৎসা নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরতে পারেন। একজন এন্ডোডেন্টিস্ট হিসেবে আমি বলব, চিকিৎসকদেরকে রোগীর বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে, তাঁদের কথা শুনতে হবে। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। রোগীর প্রতি আন্তরিকতাই সব সাফল্যের চাবিকাঠি।’

চিকিৎসার কারণে নানা দেশ ভ্রমণ করেছেন তিনি। বাংলাদেশ তাঁর ৫৬তম দেশ। কেমন লাগল বাংলাদেশ—জানতে চাইলে গুটমান বলেন, ‘যখন বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রণ পাই, খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠি। আমি এই দেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানি। আমি জানতে পারি সুন্দরবন, বেঙ্গল টাইগার এবং নদ–নদীর কথা। আমি অভিভূত এত সুন্দর দেশে আসতে পেরে। এই দেশের মতো দেশের মানুষগুলোও চমৎকার। সুযোগ পেলে বারবার আসতে চাই।’ লেখক: জোহরা শিউলী