আগস্টে ঢাকায় আসতে চান চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই
ছবি: সংগৃহীত

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই আগামী মাসের শুরুতে ঢাকায় আসতে পারেন। ওই সফরের বিষয়ে রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং আলোচনা করেছেন। আলোচনায় চীনের প্রস্তাবিত সফরসূচির সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় থাকবেন না বলে এ কে আব্দুল মোমেন সময়সূচি পাল্টানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।

ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে আগস্টের ৫ ও ৬ তারিখ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর ঢাকা সফরের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে তিনি মঙ্গোলিয়া যাবেন।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ৫ ও ৬ আগস্ট ঢাকায় আসতে চান বলে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ওই সময় তো আমি ঢাকায় থাকছি না। কাজেই তাঁরা যদি ওই সফরসূচি পরিবর্তন করেন, আমরা চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানাব।’

জানা গেছে, গতকাল চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং তাঁর দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের বিষয়টি মোটামুটি চূড়ান্ত করার বিষয়ে এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সহযোগিতা সংস্থাভুক্ত (আসিয়ান) পাঁচ দেশ, মঙ্গোলিয়া; বাংলাদেশসহ ‘বন্ধুপ্রতিম দেশ’ সফরের অংশ হিসেবে ঢাকায় আসার পরিকল্পনা করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তিনি ৫ ও ৬ আগস্ট ঢাকা সফর শেষে উলানবাটোর যাবেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন কম্বোডিয়ায় আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের (এআরএফ) ২৯তম বৈঠকে অংশ নিতে কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে থাকবেন ওই সময়। এই পরিস্থিতিতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকার পরিবর্তে উলানবাটোর সফর আগে করতে পারেন কি না, সেই প্রস্তাব করা হয়েছে; অর্থাৎ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সফরসূচিতে পরিবর্তন করলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৭ আগস্টের পরিবর্তে ৬ আগস্ট ঢাকায় ফিরবেন।

এবারের সফরটি হলে এটি হবে প্রায় পাঁচ বছর পর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর। ২০১৭ সালের নভেম্বরে আফ্রিকা যাওয়ার সময় উড়োজাহাজে জ্বালানি তেল নেওয়ার সময় ঢাকায় কয়েক ঘণ্টার যাত্রাবিরতি করেন তিনি। ওয়াং ই তখনকার পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে উড়োজাহাজে বসে আলোচনা করেছিলেন। সেটি ছিল চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ঐতিহাসিক ঢাকা সফরের তিন মাসের মাথায় ওয়াং ইর যাত্রাবিরতি।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রস্তাবিত ঢাকা সফরটি চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের কৌশলগত সহযোগিতার পাশাপাশি বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী চীন। আলোচনায় দুই দেশের সম্পাদিত ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনায় আসবে। এ মাসে লানচ্যাং-মেকং সহযোগিতা জোটের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই মিয়ানমার সফর করেন। আর আগস্টে ঢাকায় এলে খুব স্বাভাবিকভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টিতে জোর দেওয়া হবে। বিশেষ করে চীন একটি পাইলট প্রকল্পের আওতায় হাজার দেড়েক রোহিঙ্গাকে দিয়ে প্রত্যাবাসন শুরুতে জোর দিচ্ছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাংলাদেশ সফরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন অর্থনৈতিক জোট আইপিইএফের বিষয়টি গুরুত্ব পেতে পারে। চীন বরাবরই মার্কিন নেতৃত্বাধীন ভারত মহাসাগরীয় কৌশল বা আইপিএফ ও চার-দেশীয় নিরাপত্তা জোট কোয়াড নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত আইপিইএফে যোগ না দেওয়ায় ঢাকা-বেইজিং কৌশলগত সহযোগিতা কীভাবে বাড়ানো যায়, সেটিও আলোচনায় তুলতে পারেন ওয়াং ই।