হাদি হত্যার বিচার ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ চায় গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি
শরিফ ওসমান হাদি হত্যার অবিলম্বে বিচার এবং এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ‘পরিকল্পিত সন্ত্রাসের’ সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। একই সঙ্গে জননিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দায়িত্ব থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
আজ শুক্রবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এসব দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টায় সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। ১২ ডিসেম্বর তাঁকে গুলি করা হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মধ্যরাত থেকে সারা দেশে পরিকল্পিত সন্ত্রাস চালানো হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
হামলার ঘটনাগুলোর বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গণমাধ্যমের বরাতে আমরা জেনেছি, মধ্যরাতে একটি চিহ্নিত প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী কর্তৃক দেশের দুটি গণমাধ্যম প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার কার্যালয়ে ভাঙচুর এবং সাংবাদিকদের ভবনে বন্দী রেখে অগ্নিসংযোগে ঘটানো হয়েছে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে সাংবাদিক সহযোদ্ধাদের সুরক্ষা দিতে যাওয়ার প্রাক্কালে নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর হামলা করা হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, এই গোষ্ঠীটি ছায়ানট ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটিয়েছে।’
ময়মনসিংহের ভালুকার ঘটনা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পাইওনিয়ার নিট কম্পোজিট কারখানার শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে ‘ধর্ম নিয়ে কটূক্তির’ অভিযোগে ‘তৌহিদি জনতা’ পিটিয়ে মেরে ফেলে এবং তাঁর মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে।’
এসব ঘটনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘চরম নিষ্ক্রিয়তা ও গাফিলতি’ দেখা গেছে বলে মনে করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, ‘আমরা দেখেছি, হাদির হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ভারতে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছে। তদন্তে কালক্ষেপণ করা হয়েছে।’
কমিটি আরও বলেছে, ‘হাদির হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পূর্বপরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা সামলানোর ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থতার নিদর্শন দেখিয়েছে। জননিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ অপারগ ও ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব থেকে অপসারণের দাবি জানাই আমরা।’
বিবৃতিতে বলা হয়, গণ–অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে শ্রমিক হত্যা, আদিবাসী হত্যা, বাউল-মাজারের ওপর হামলা এবং মব সন্ত্রাসকে উপদেষ্টাদের পক্ষ থেকে ‘প্রেশার গ্রুপ’ হিসেবে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশে প্রতিক্রিয়াশীল সন্ত্রাসীদের পক্ষ নেওয়া হয়েছে। হাদির হত্যা এবং দেশব্যাপী নৈরাজ্য ও আতঙ্কের ঘটনাগুলো এরই ধারাবাহিকতা।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলছে, জনগণের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার ও নিরাপত্তা দিতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। নাগরিক ও তার অধিকারের কথা বলা হলে পুলিশি নিপীড়ন করা হচ্ছে একই ফ্যাসিবাদী কায়দায়। অথচ চিহ্নিত সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে প্রতিহত করার ক্ষেত্রে তাঁদের শৈথিল্য পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রতি সমর্থনকে প্রমাণ করে।
বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির পক্ষ থেকে হাদির পরিকল্পিত হত্যাসহ দেশজুড়ে সংঘটিত নব্য ফ্যাসিবাদী ও প্রতিক্রিয়াশীল পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গণতন্ত্রমনা জনগণের সব অংশের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির পক্ষ থেকে বিবৃতিতে সই করেছেন আনু মুহাম্মদ, মাহতাব উদ্দীন আহমেদ, মারজিয়া প্রভা, ফেরদৌস আরা, আকরাম খান, রাফিকুজ্জামান ফরিদ, আফজাল হোসেন, ফারহানা শারমীন ও নওশাদ এহসানুল হক।