জেড আই খান পান্নার নাম বাদ দিতে এবার বাদীর আবেদন
হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহার থেকে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্নার নাম বাদ দিতে আবেদন করেছেন বাদী মো. বাকের।
আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে এ আবেদন করা হয়েছে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন রাজধানীর খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দাউদ হোসেন।
এই খিলগাঁও থানাতেই জেড আই খান পান্নাসহ ১৮০ জনের বিরুদ্ধে নিজের ছেলে আহাদুল ইসলামকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেছিলেন মো. বাকের।
জেড আই খান পান্নার বিরুদ্ধে করা মামলায় গত ১৯ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আহাদুল ইসলামকে গুলি ও মারধর করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। ঘটনার প্রায় তিন মাস পর ১৭ অক্টোবর খিলগাঁও থানায় মামলাটি করেন আহাদুলের বাবা মো. বাকের। এই মামলায় ৯৪ নম্বর নামটি জেড আই খান পান্নার।
সুপ্রিম কোর্টের এই প্রথিতযশা আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীর বিরুদ্ধে মামলার পর দেশজুড়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। আজ সেই হত্যাচেষ্টা মামলায় আগাম জামিন পেয়েছেন জেড আই খান পান্না।
আজ হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ জেড আই খান পান্নাকে এ মামলায় পুলিশি প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন দিয়েছেন।
আজ সকালেই এ হত্যাচেষ্টা মামলার বাদী মো. বাকের প্রথম আলোকে বলেন, তিনি জেড আই খান পান্নাকে চেনেন না। বিএনপি ও জামায়াতের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে তিনি এ মামলা করেছেন। আর এ কাজে পুলিশ সহযোগিতা করেছে।
দুপুর ১২টার দিকে থানায় এসে সেই বাকেরই আবার আইনজীবী পান্নাকে বাদ দেওয়ার আবেদন জানান বলে জানিয়েছেন খিলগাঁও থানার ওসি মো. দাউদ।
আবেদনে বলা হয়, ‘উক্ত এজাহারের ৯৪ নম্বর ক্রমিকে বর্ণিত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্নাকে (৬৫) অজ্ঞতা ও ভুলবশত আসামি করা হয়। ৯৪ নম্বর ক্রমিকে বর্ণিত ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে মামলাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করিতে মর্জি হয়।’
তবে এই আবেদনের বিষয়ে মো. বাকেরের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
খিলগাঁও থানার ওসি মো. দাউদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাদী মো. বাকেরের আবেদন পেয়েছি। উনি নিজে এসেই তা দিয়ে গেছেন। দেখুন, সেখানে ওনার স্বাক্ষরও আছে। আমি এই আবেদন এখন তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়ে দেব। তাঁকে চাপ দিয়ে নাম প্রত্যাহার করার আবেদন করানো হয়নি। নিজে থেকেই দিয়েছেন।’
জেড আই খান পান্না মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারপারসন। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী নানা আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো বন্ধ করার আদেশ চেয়ে গত ২৯ জুলাই আইনজীবীদের একটি দল হাইকোর্টে আবেদন করে। ওই আবেদনের পক্ষে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন জেড আই খান পান্না। শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণের সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ২৯ জুলাই নাগরিক উদ্যোগে গঠিত জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের সদস্যও ছিলেন তিনি।
জেড আই খান পান্নাসহ ১৮০ আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৯ জুলাই বিকেলে আহাদুল ইসলামসহ অন্যরা মেরাদিয়া বাজারের সামনে অবস্থান করছিলেন, তখন আসামিদের অনেকেই অজ্ঞাতনামা বিজিবি, পুলিশের সদস্য এবং আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা অন্য কয়েকজন আসামির নির্দেশে গুলি চালান।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আহাদুলসহ অন্যরা মেরাদিয়া বাজারের কাছে বিক্ষোভ করছিলেন। তখন নাম না জানা বিজিবি, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা অন্য আসামিদের নির্দেশে গুলি চালান। এ সময় আহাদুল গুলিবিদ্ধ হন। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে থাকা আসামিরা তাঁকে মারধরও করেন।
মামলাটিতে আসামি হিসেবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বর্তমান মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নাম রয়েছে।