খাতা জমা দিয়ে আবার ফিরে পরীক্ষা দিলেন তিন ছাত্রলীগ নেতা

পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যে খাতা জমা দেন তিন ছাত্র। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে আবার পরীক্ষা দেওয়ার আবদার করেন তাঁরা। এ সময় তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক শাহদাত হোসেন ওরফে ওমর, সাদমান সাকিবসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা। কিন্তু শিক্ষক রাজি হচ্ছিলেন না। তখন তাঁরা শিক্ষককে তিন ছাত্রের খাতা ফেরত দিতে বাধ্য করেন। যাওয়ার সময় ওই শিক্ষককে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে যান ছাত্রলীগ নেতারা।

চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পরীক্ষা চলাকালে আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের হুমকির শিকার ওই শিক্ষকের নাম প্রকাশ সিকদার। তিনি চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর। বিষয়টি তদন্তের জন্য তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসনের একজন ম্যাজিস্ট্রেট পরীক্ষাকেন্দ্রে যান।

ওই তিন পরীক্ষার্থী হলেন—মুহিতুল আজিম, মিফজাহুল আশরাফ ও মোশাররফ হোসেন। তাঁরা তিনজনই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে তাঁদের কোনো পদ–পদবি নেই।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকাল ১০টায় চতুর্থ পর্বের পরীক্ষা শুরু হয়। ৩১১ নম্বর কক্ষে পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করছিলেন প্রকাশ সিকদার ও সাদিয়া জাহান নামের দুই শিক্ষক। এ সময় তিন ছাত্র তাঁদের আসন পরিবর্তন করে পছন্দমতো আসনে বসে পড়েন। এ সময় শিক্ষকেরা তাঁদের নিজ নিজ আসনে বসার নির্দেশ দেন। এরপর তিন ছাত্র পরীক্ষায় এক ঘণ্টা না যেতেই পরীক্ষার খাতা জমা দিয়ে চলে যান। এ সময় নিয়মানুযায়ী তাঁদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্রও রেখে দেওয়া হয়।

কিছুক্ষণ পর পলিটেকনিক ছাত্র সংসদের জিএস শাহদাতসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা ওই তিন ছাত্রকে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্র উপস্থিত হন। এ সময় ছাত্র সংসদের নেতারা তিন ছাত্রকে পরীক্ষার খাতা ও প্রশ্নপত্র ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। এতে অস্বীকৃতি জানান প্রকাশ সিকদার। পরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শহীদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁর নির্দেশে তিন ছাত্রকে আবার তাঁদের খাতা ফেরত দেওয়া হয়। তাঁরা আবার পরীক্ষায় অংশ নেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকাশ সিকদার বলেন, ‘আমি খাতা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমাকে গালাগাল করে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন শাহদাত ও সাকিবেরা। পরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের নির্দেশে তাঁদের খাতা ফেরত দিই। ক্যাম্পাস থেকে বের হলে আমাকে দেখে নেওয়া হবে বলে তাঁরা হুমকি দিয়ে যান। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেব।’

জানা গেছে, শাহদাত হোসেন পলিটেকনিকের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও পলিটেকনিক ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান যুবলীগ নেতা মো. মহিউদ্দিনের অনুসারী। সাদমান সাকিবও ইনস্টিটিউটের ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্র সংসদের জিএস শাহদাত হোসেন প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, ‘ওই শিক্ষক বামপন্থী রাজনীতি করেন। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে পরীক্ষার হলে নানা কথা বলে বেড়ান। আজ তিন ছাত্রকে বিনা অজুহাতে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেন। পরে আমরা অধ্যক্ষ ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে বলে তাঁদের পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। কেউ শিক্ষককে কোনো হুমকি দেয়নি।’

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছোট একটা ঝামেলা হয়েছে। ছাত্র সংসদের জিএস পরীক্ষার হলে গিয়ে ছাত্রদের পরীক্ষার খাতা দেখাদেখি করার সুযোগ দিতে চাপাচাপি করেছেন। শিক্ষককে দেখে নেবেন বলে হুমকি দিয়েছেন। শিক্ষকদের সঙ্গে তাঁদের কথা–কাটাকাটি হয়েছে। ওই তিন ছাত্রকে পরে পরীক্ষা দিতে দিয়েছি।’

পলিটেকনিক ছাত্রলীগের সভাপতি ইরামুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, শাহদাত হোসেন পলিটেকনিক ছাত্রলীগের কমিটির কোনো পদে নেই। তবে ছাত্র সংসদের ছাত্রলীগ অনুমোদিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক তিনি।