এবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে ‘আরজি’ জানালেন বুয়েটের ছাত্রলীগ-সমমনা ৬ শিক্ষার্থী

বুয়েটের শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করেন ছয় শিক্ষার্থী। ঢাকা, ৪ এপ্রিল
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে নিরাপদে ও সৎসাহসের সঙ্গে ‘প্রগতিশীল রাজনীতির’ চর্চা করতে চান ছাত্রলীগ-সমমনা ছয়জন ছাত্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আরজি জানিয়ে তাঁরা বলেছেন, ‘আমাদের নিরাপদ ও স্বাধীন মতামত প্রকাশের ক্যাম্পাস উপহার দিন। দেশ ও দশের প্রতি ভালোবাসা রেখে সবার কল্যাণকে মাথায় রেখে আমরা ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিস্থিতি চাই এবং জীবনের নিরাপত্তা চাই।’

আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বুয়েটের শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করে ছয় শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা একটি আবেদন পড়ে শোনান। এই ছাত্ররা হলেন আশিকুল আলম, অর্ঘ্য দাস, অরিত্র ঘোষ, তানভীর মাহমুদ, সাগর বিশ্বাস ও মিশু দত্ত। বুয়েটের বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়নরত এই শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের সমর্থক বলে পরিচিত।

এর আগে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বুয়েটের ড. এম এ রশীদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আরজি জানান বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এক খোলাচিঠিতে তাঁরা বলেন, ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও রুখে দিতে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁদের সবিনয় অনুরোধ, প্রয়োজনে আইন সংস্কার করে হলেও বুয়েটকে যাতে ছাত্ররাজনীতির বাইরে রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রী যেন তাঁদের পাশে থাকেন।

আজ বিকেলে ছাত্রলীগ-সমর্থকদের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বুয়েটছাত্র আশিকুল আলম ও অরিত্র ঘোষ। এতে বলা হয়, ‘জীবনের হুমকিসহ নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হচ্ছে। ছাত্রশিবির পরিচালিত বাঁশেরকেল্লার পক্ষ থেকে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য চাওয়া হচ্ছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের নাম, মুঠোফোন নম্বর, শিক্ষার্থী নম্বর থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে মেসেজিং অ্যাপগুলো ব্যবহার করে। আমরা ২১ জন এ ধরনের হুমকির সম্মুখীন। এর প্রমাণ এরই মধ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি।’ তাঁরা বলেন, ‘হে দেশরত্ন, বঙ্গবন্ধু তনয়া, আমাদের সাহায্য করুন। আমরা সব মতের সাধারণ বুয়েট শিক্ষার্থীরা সবাই মিলে স্বাভাবিক ও নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই। আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাই। আমরা চাই না আমাদের ক্যাম্পাস জঙ্গি তৈরির কারখানা হোক।’
হিযবুত তাহরীর বা শিবিরের সন্ত্রাসী আক্রমণ থেকে বুয়েটের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি কতটা নিরাপদ, সে প্রশ্ন তুলে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রযন্ত্র মেধাবীদের এই ক্যাম্পাসকে কতটা নজরদারিতে রেখেছে বা এর সুরক্ষা নিশ্চিত করছে, তা আমরা জানি না। যেকোনো বড় ধরনের নাশকতার ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দিলে হোলি আর্টিজানের মতো কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছি।’

লিখিত বক্তব্যে বুয়েট ক্যাম্পাসে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা জোরদার করার দাবি জানানো হয়। বলা হয়, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে আমরা আমাদের আকুল আরজি রাখলাম। আমাদের নিরাপদ ও স্বাধীন মতামত প্রকাশের ক্যাম্পাস উপহার দিন। দেশ ও দশের প্রতি ভালোবাসা রেখে সবার কল্যাণকে মাথায় রেখে আমরা ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিস্থিতি চাই এবং জীবনের নিরাপত্তা চাই। আমরা বুয়েট ক্যাম্পাসে নিরাপদে ও সৎসাহসের সঙ্গে প্রগতিশীল রাজনীতির চর্চা করতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতিকে একপ্রকার নিষিদ্ধ কাজ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আমরা প্রগতিশীল রাজনৈতিক চিন্তা-ধারণায় বিশ্বাসী এবং স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আমরাও অংশ নিতে চাই বলে আমাদের ক্যাম্পাসে দীর্ঘ একটি সময় ধরে মানসিক নিপীড়ন চলে আসছে, যা বর্তমানে আমাদের জীবনের হুমকিতে রূপ নিয়েছে।’

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে আমরা বলতে চাই, শুধু স্বাধীন মতপ্রকাশের জন্য যে পরিমাণ বুলিং করা হয়েছে আমাদের ওপর, তা অকথ্য। বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ ভাইয়ের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয়। কিন্তু এরপর র‍্যাগিং বা এর সঙ্গে জড়িত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আইন ভঙ্গের অভিযোগ না থাকলেও সংখ্যালঘু ছাত্রদের ওপর শুরু হয় প্রকাশ্যে অপমান করা ও অপবাদ দেওয়া। এটি হয় শুধু স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হওয়ার কারণে। পরে আমরা বুয়েটে ভর্তি হলে আমরাও জাতির জনকের আদর্শকে লালন করতে চাইলেই আমাদের সঙ্গে বুলিং ও নানাভাবে আমাদের হয়রানি করা হয়।’


লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২৭ মার্চ দিবাগত রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বুয়েট প্রাঙ্গণে রাতে উপস্থিত হলে তাঁর সঙ্গে বুয়েটে অধ্যয়নরত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ইমতিয়াজ হোসেনের সৌজন্য বিনিময়ের কারণকে অভিযোগ হিসেবে তুলে ধরে পরীক্ষা বর্জনের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ইমতিয়াজের হল বহিষ্কার দাবি করা হলে কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই উপাচার্য কর্তৃক তা গৃহীত হয়। পরে তাঁকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিও জানানো হয়, যা আসলে একজন শিক্ষার্থীর একাডেমিক ক্যারিয়ার ধ্বংসের শামিল। এই আন্দোলন ক্যাম্পাসে শান্তির পরিবেশ নষ্ট করে, যা পরীক্ষা বয়কটের মতো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এসব ঘটনায় সব সময়ই হোতা কিছু নির্দিষ্ট মানুষ, যাদের সঙ্গে গত বছরের জুলাইয়ে শিবির সন্দেহে আটক ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা ও মৌলবাদী চিন্তা পালনের দৃষ্টান্ত মেলে। অনেক ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক মতামত প্রতিষ্ঠার জোরও চালানো হয় তাদের দ্বারা। কিন্তু এই অন্ধকার রাজনীতি আড়াল হয় আবরার ফাহাদ ভাইকে হারানোর বেদনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগকে ব্যবহার করে। সম্প্রতি বুয়েটের ইসিই ভবনের লিফটে হিযবুত তাহরীর পোস্টারে কিউআর কোডের মাধ্যমে ‘খিলাফত প্রতিষ্ঠার’ আহ্বান করা হয়, যা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত প্রাতিষ্ঠানিক মেইলেও পাঠানো হয়।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন