১ হাজার ২০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে সাইফুজ্জামান ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীফাইল ছবি

সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী রুকমীলা জামানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ বৃহস্পতিবার সিআইডির এক কর্মকর্তা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরের কোতোয়ালি থানায় এই মামলা করেন। সিআইডি বলছে, পাচার করা অর্থ দিয়ে সাইফুজ্জামান দুবাইয়ে ২২৬টি ফ্ল্যাট কেনার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্থাপন, ব্যবসায় বিনিয়োগ ও পরিচালনা করছেন।

সিআইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে পর্যায়ক্রমে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। শিল্পপ্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির তিনবারের সভাপতি তিনি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের বার্শা সাউথ, থানিয়া, গালফ কমার্শিয়াল, খাইরান, বুর্জ খলিফা, জাবাল আলী, ওয়ার্ল্ড আইল্যান্ড, জাবিল দ্বিতীয়, মার্শা দুবাই, মিআইসেম, নাদ আল সেবা ফার্স্ট, ওয়াতি আল সাফা-৩সহ বিভিন্ন স্থানে ২২৬টি ফ্ল্যাট কিনেছেন। এ ছাড়া তাঁর স্ত্রী রুকমীলা জামানের নামে দুবাইয়ের আল বার্শা সাউথ-৩, কিউ গার্ডেনস বৌটিক রেসিডেন্স ব্লক ‘বি’ নামে দুটি সম্পত্তি থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

সিআইডি আরও জানায়, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে দুবাই ইসলামি ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও ফার্স্ট আবুধাবি ব্যাংকের দুটি হিসাবসহ মোট চারটি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব ব্যাংক হিসাবে বিভিন্ন অঙ্কের দিরহাম ও মার্কিন ডলারের লেনদেন-সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী রুকমীলা জামান এবং তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অজ্ঞাত ব্যক্তিদের পারস্পরিক যোগসাজশে দুবাইয়ের রাস আল খাইমাহ ইকোনমিক জোনের অনুমতিক্রমে বিল্ডিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন ম্যাটেরিয়াল প্রোডাক্ট ব্যবসার জন্য জেবা ট্রেডিং এফজেডই এবং কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবসার জন্য র‍্যাপিড র‍্যাপটর এফজেডই নামে দুটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, বিনিয়োগ এবং পরিচালনার তথ্য পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় জানা যায়, বিদেশে কোম্পানি নিবন্ধন, বিনিয়োগ ও সম্পত্তি অর্জনের জন্য সাইফুজ্জামান চৌধুরীর অনুকূলে সরকার থেকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি।

সিআইডি বলছে, এভাবে সাইফুজ্জামান চৌধুরী বিদেশে সম্পত্তি ক্রয়, কোম্পানি নিবন্ধন এবং ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমা করার মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাচার করেছেন, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অর্থ পাচার-সংক্রান্ত অভিযোগটির অনুসন্ধান শেষে সাইফুজ্জামান চৌধুরী, তাঁর স্ত্রী রুকমীলা জামানসহ অজ্ঞাত ৫-৭ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় মামলা করে চট্টগ্রামের সিআইডি। সাইফুজ্জামান ও তাঁর স্ত্রী চট্টগ্রাম মহানগরের কোতোয়ালি থানার সার্সন রোডের ভলকার্ট হাউসের বাসিন্দা।