পুলিশের অভিযোগপত্র
শ্রমিক লীগ নেতার নির্দেশে ৪ বাসে আগুন, দায় চাপাতে চেয়েছিলেন আন্দোলনকারীদের ওপর
চট্টগ্রামে গত বছরের জুলাইয়ে বিআরটিসির চারটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে এক শ্রমিক লীগ নেতার নির্দেশে। বিআরটিসির বাস ইজারা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ ওই শ্রমিক লীগ নেতা চার লাখ টাকা চুক্তিতে এক ব্যক্তিকে ভাড়া করে তাঁর মাধ্যমে বাসগুলোতে আগুন দেন। তখন দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলছিল। আন্দোলনকারীদের ওপর দোষ চাপাতে বাসে আগুন দেওয়ার জন্য ওই সময়কে বেছে নেওয়া হয়।
বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আদালতে দেওয়া পুলিশের অভিযোগপত্রে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ঘটনাস্থলের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ভিডিও চিত্র, আসামির জবানবন্দি ও তদন্ত শেষে সম্প্রতি অভিযোগপত্রটি আদালতে দেওয়া হয়।
অভিযুক্ত শ্রমিক লীগ নেতার নাম দিদারুল আলম। তিনি নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানা শাখা শ্রমিক লীগের সভাপতি। তাঁর সঙ্গে অভিযোগপত্রে সোহেল রানা নামের এক লেগুনাচালককে আসামি করা হয়েছে। তিনি দিদারুল আলমের সহযোগী।
চট্টগ্রাম জেলা কোর্ট পরিদর্শক হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হাটহাজারী থানা-পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি আগামী ১৪ মে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে গ্রহণের শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনের এ মামলার অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে বায়েজিদ বোস্তামী থানা শ্রমিক লীগ নেতা দিদারুল আলম ও তাঁর সহযোগী লেগুনাচালক সোহেল রানাকে। তাঁরা দুজনই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তিন পৃষ্ঠার অভিযোগে ১৫ জনকে সাক্ষী রাখা হয়।
নগরের অক্সিজেন-হাটহাজারী সড়কের নতুনপাড়া এলাকায় ছয় একর জায়গার ওপর বিআরটিসি ডিপো অবস্থিত। সেখানে ৯২টি সরকারি বাস রয়েছে। গত বছরের ২০ জুলাই রাত ১২টার দিকে ডিপোর ক্লিনিং শেডের পাশে থাকা চারটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে একটি বাসের ১৬টি আসন এবং আরেকটির ৮টি আসন পুড়ে গেছে। বাকি দুটি বাস আংশিক পুড়ে যায়। এতে মোট ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় বিআরটিসি ডিপো চট্টগ্রামের ব্যবস্থাপক মো. জুলফিকার বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় মামলা করেন। ঘটনার দুই দিন পর ২২ জুলাই পুলিশ সিসি ক্যামেরা দেখে লেগুনাচালক সোহেলকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই দিন দিদারুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, বিআরটিসি বাস ডিপোতে থাকা বাসগুলোর ইজারা চেয়ে পাননি শ্রমিক লীগ নেতা দিদারুল আলম। এর আগেও বাসের ইজারা নিয়ে ২০২২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিআরটিসি ডিপো এলাকায় আবদুল হালিম ওরফে রুবেল নামের একজনকে ছুরিকাঘাতে খুন করার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। পুলিশের অভিযোগপত্রে বলা হয়, বিআরটিসি বাসে সুপারভাইজার দেওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে হালিমকে খুন করা হয়।
গত বছরের জুলাইয়ে সারা দেশে যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়, সেই সময়কে বেছে নেন দিদারুল। তাঁর পূর্বপরিচিত লেগুনাচালক সোহেল রানাকে ঘটনার দুই দিন আগে বিআরটিসি ডিপো এলাকার সামনে ডেকে আনেন। তাঁকে বলেন, ডিপোর ভেতর থাকা পাঁচটি বাসে আগুন লাগিয়ে দিতে হবে। এ জন্য তাঁকে চার লাখ টাকা দেওয়া হবে। তবে অগ্রিম হিসেবে তেল কিনতে তাঁকে ৫০০ টাকা দেওয়া হয়। সোহেল বাস ডিপোর পাশের একটি চা-দোকান থেকে একটি গ্যাস লাইটার চুরি করেন। পরে ঘটনার দিন ২০ জুলাই রাতে দেয়াল টপকে ডিপোতে ঢোকেন। একটি বাসের ভেতর থেকে ব্রেক অয়েল নেন। তিন থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে চারটি বাসের আসনের ফোমে ব্রেক অয়েল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালতে এ ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন সোহেল।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও হাটহাজারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুমন চন্দ্র নাথ প্রথম আলোকে বলেন, দিদারুল লোক ভাড়া করে সরকারি বাসে আগুন ধরিয়ে দেন, যাতে দোষ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ঘাড়ে চাপে।
বিআরটিসি চট্টগ্রাম ডিপোর ব্যবস্থাপক মো. জুলফিকার প্রথম আলোকে বলেন, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের নাম ভাঙিয়ে দিদারুল ডিপোর বাসগুলোতে সুপারভাইজারের দেওয়াসহ নানা বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করতেন। ইজারা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি লোক ভাড়া করে বাসে আগুন ধরিয়ে দেন।