আ.লীগ আমলের ব্যাপক উন্নয়ন বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
আওয়ামী লীগের গত ১৪ বছরের শাসন আমলে হওয়া ব্যাপক উন্নয়ন বিবেচনায় নিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, শুধু আর্থসামাজিক উন্নয়নই নয়, প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায়ও আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
আজ সোমবার সকালে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণপূর্ত অধিদপ্তর, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সম্পাদিত কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর রমনা পার্কের রমনার বটমূলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। তিনি রমনা পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রমনা লেকসহ সার্বিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ, মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য রাজধানীর মিরপুরে ১ হাজার ৪০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণসহ ১১টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আশা করি, গত ১৪ বছরে বাংলাদেশে যে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে, জনগণ সেদিকে একটু বিশেষভাবে মনোযোগ দেবে।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে। আর তারা এটা করেছে শুধু এ কারণেই যে আমরা দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, দেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এটা করা সম্ভব হয়েছে দেশে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার ক্ষমতায় আছে বলে।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য, ২০৪১ সালের মধ্যে “স্মার্ট বাংলাদেশ” আমরা গড়ে তুলব। আমরা ই-গভর্ন্যান্স চালু করব, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্যশিক্ষা—প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার নিশ্চিত করব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে তাল মেলাতে সক্ষম দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে তাঁর সরকার ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রত্যেক নাগরিকের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাঁদের মৌলিক চাহিদাগুলো যাতে পূরণ হয়, তার নিশ্চয়তা রেখেই সরকার প্রকল্প গ্রহণ ও তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
এ সময় করোনা–পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ, পানি ও জ্বালানির ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ডে প্রায় দেড় শ ভাগ বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। এমন অবস্থা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। কাজেই এখানেও আমি সবাইকে অনুরোধ করব, বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সবাই আবার একটু সাশ্রয়ী হবেন।’
দীর্ঘস্থায়ী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ২০২৩ সালে বিশ্ব সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক মন্দা প্রত্যক্ষ করবে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পূর্বাভাস দিয়েছে। বিষয়টি উল্লেখ করে দেশবাসীর উদ্দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর এবং প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার আহ্বানও পুনর্ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।
রকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের খাবার উৎপাদন বাড়াই, তবে অর্থনৈতিক মন্দা আমাদের আঘাত করতে সক্ষম হবে না।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘১৯৭৫–এর পর এ দেশে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে বন্দুকের নল দিয়ে, অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে; মার্শাল ল চলেছে। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মাধ্যমে দেশে যে গণতান্ত্রিক ধারা শুরু হয়েছিল, সেটা ব্যাহত হয়ে যায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এভাবেই ২১ বছর সরকার পরিচালিত হয়। ফলে মানুষের উন্নয়নের গতিও ব্যাহত হয়। অথচ জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে প্রবৃদ্ধি ৯ ভাগের ওপরে তুলে দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫–এ জাতির পিতাকে হত্যার পর এই অগ্রগতি থেমে যায়। কারণ, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীকে দিয়ে কখনো দেশের উন্নয়ন হয় না। আর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করেই এই জনগণের কিছুটা হলেও উন্নয়ন করতে পেরেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার হত্যার পর যিনি সেনাপ্রধান হলেন, তিনিই একদিন নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিলেন। এই ঘোষিত রাষ্ট্রপতি, অনির্বাচিত লোক দিয়ে কখনো দেশের উন্নতি হয় না, এটা প্রমাণিত সত্য।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, এ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন। এ সময় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।