রোহিঙ্গা নারী ও কন্যাশিশুদের জন্য জরুরি সুরক্ষা প্রয়োজন

গুলশানের একটি হোটেলে একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত গবেষণার ফলাফল প্রকাশ ও সংলাপ অনুষ্ঠান হয়। ঢাকা, ৩১ আগস্টছবি: একশনএইডের সৌজন্যে

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরগুলোতে যৌন হয়রানিকে সবচেয়ে ‘বড় উদ্বেগের’ বিষয়। এ ছাড়া বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ একটি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা নারী ও কন্যাশিশুদের জন্য অবিলম্বে জেন্ডার-সংবেদনশীল সুরক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের সুপারিশ করা হয়েছে একটি গবেষণা প্রতিবেদনে।

একশনএইড ইউকের সহায়তায় ও পিপলস পোস্টকোড লটারির অর্থায়নে এবং স্থানীয় সংস্থা অগ্রযাত্রার সহযোগিতায় গবেষণাটি পরিচালনা করে একশনএইড বাংলাদেশ। নারীবাদী, অংশগ্রহণমূলক এবং কমিউনিটি-নেতৃত্বাধীন এই গবেষণায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প ১ই, ৮ই এবং ৫-এর ৬৬ জন নারী ও কিশোরী এবং উখিয়ার ৩০ জন স্থানীয় নারী মিলে ৯৬ জন অংশ নেন।

রোববার গুলশানের একটি হোটেলে একশনএইড বাংলাদেশের আয়োজনে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ ও সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ‘আরার হেফাজত: রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীদের কণ্ঠস্বর মাধ্যমে তাদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ, দূতাবাস, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, দাতা সংস্থা, গবেষক, বিশেষজ্ঞ এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে একশনএইড বাংলাদেশের হেড অব হিউম্যানিটারিয়ান প্রোগ্রাম মো. আবদুল আলীম সংস্থার মানবিক কর্মসূচির একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেন।

গবেষণার মূল তথ্য ও ফলাফল উপস্থাপন করেন সংস্থাটির পলিসি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার তামাজের আহমেদ। এরপর গবেষণায় পাওয়া রোহিঙ্গা নারী ও কন্যাশিশুদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একটি সংলাপ পরিচালনা করেন একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির।

ফারাহ্ কবির বলেন, ‘আমাদের গবেষণাটি ছিল অংশগ্রহণমূলক। রোহিঙ্গা নারীরা এখানে নিজেদের কথা বলার চেষ্টা করেছেন। সেটাই আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এই গবেষণায় আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই, রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীরা আজ বহুমুখী ঝুঁকির মুখে। তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতে এখনই কৌশলগত পরিবর্তন এনে দীর্ঘমেয়াদি, অধিকারভিত্তিক ও জেন্ডার-সংবেদনশীল উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।’

অংশগ্রহণকারীরা জোর দিয়ে বলেন, শিবিরগুলোর ভেতরে নারীদের ও কিশোরীদের জন্য নিরাপদ ও পর্যাপ্ত আলোযুক্ত টয়লেট এবং গোসলের স্থান নিশ্চিত করা, নারী নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেওয়া এবং নারীদের নেতৃত্বে সুরক্ষা কমিটি গঠন করা জরুরি। পাশাপাশি সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রভাব কমাতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও শক্তিশালী করা এবং আইনি সহায়তা সহজলভ্য করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

ইউএন উইমেনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ গীতাঞ্জলি সিং সুরক্ষাব্যবস্থাগুলো শুধু নারী ও কন্যাশিশুদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সব ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে নারী ও কন্যাশিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, এমন তহবিল হ্রাসের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার বিষয়ে সুপারিশ করেন।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) ডেপুটি কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ জুলিয়েট মুরেকেইসনি জোর দিয়ে বলেন, ‘নারীদের অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা এবং পুরুষতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক বাধাগুলো এখনো বড় চ্যালেঞ্জ এবং পুরুষদের অসম্পৃক্ততা এই অগ্রগতিকে আরও সীমিত করছে।’

আইআরসির কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিনা রহমান বলেন, নারীদের দুর্বলতার মূল কারণ মোকাবিলায় ক্ষমতায়ন কর্মসূচির সঙ্গে শিক্ষাকে যুক্ত করা জরুরি। উন্নয়ন কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল বন্ধের পর জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা বাড়তে পারে বলে তিনি সতর্ক করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ইউরোপীয় কমিশনের সুশাসন ও মানবাধিকারবিষয়ক প্রোগ্রাম ম্যানেজার লায়লা জেসমিন, ঢাকায় নিযুক্ত নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের জেন্ডার ও সিভিল সোসাইটির সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজর মুশফিকা সাতিয়ার, এনআরসির পার্টনারশিপ কো-অর্ডিনেটর কানিজ ফাতিমা, জিআইজেডের প্রতিনিধি আরসালান সাবিরবেকভ এবং অগ্রযাত্রার নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার চৌধুরীসহ জাতিসংঘ, দূতাবাস, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, দাতা সংস্থা, গবেষক, বিশেষজ্ঞ এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।