চসিকের দুই কর্মকর্তার ব্যবসায়ীকে মারধরের ভিডিও ফেসবুকে

ব্যবসায়ীর ওপর চড়াও হয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক দোকানমালিককে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। সিটি করপোরেশনের এই দুই কর্মকর্তা হলেন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম এবং প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার মো. লতিফুল হক কাজমী। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরের আগ্রাবাদে সিঙ্গাপুর–ব্যাংকক মার্কেটে এ ঘটনা ঘটে। তবে মারধরের ভিডিও শুক্রবার রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

মারধরের শিকার ব্যক্তি হলেন মনির হোসেন। তিনি নগরের সিঙ্গাপুর–ব্যাংকক দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির প্রচার সম্পাদক।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নগরের আগ্রাবাদে অবস্থিত এই মার্কেট সিটি করপোরেশনের। সেখানে সিটি করপোরেশনের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল মালেকের পরিবারের একটি দোকান রয়েছে। তিনি ওই দোকান একজনকে ভাড়া দিয়েছিলেন। তবে সাত মাস আগে দোকানে তালা দিয়ে চলে যান ভাড়াটে। এরপর দোকান বুঝে পেতে চেষ্টা করেন আবদুল মালেক। তবে এতে বাধার সম্মুখীন হন তিনি। পরে সিটি করপোরেশনের দ্বারস্থ হন। এরপর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা দোকান বুঝিয়ে দিতে গেলে মারধরের ঘটনা ঘটে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, সিটি করপোরেশনের দুই কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম ও লতিফুল হক কাজমী সমিতির কার্যালয়ে বসে দুজনের সঙ্গে আলাপ করছিলেন। ডান পাশে বসা মনির হোসেনের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। সেখানে থাকা একজন প্রবীণ ব্যক্তি থামানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে রেজাউল করিম আসন ছেড়ে মনির হোসেনের দিকে তেড়ে যান। থাপ্পড় দিতে থাকেন। এরপর লতিফুল হকও চড়–থাপ্পড় দেন। পরে সিটি করপোরেশনের এক নিরাপত্তাকর্মী লাঠি দিয়ে মারতে মারতে কার্যালয়ের বাইরে নিয়ে যান।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সিঙ্গাপুর–ব্যাংকক মার্কেট দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, মার্কেটের একটি দোকানের মালিক সিটি করপোরেশনের সাবেক এক কর্মকর্তা। তিনি তাঁর দোকান ১১ লাখ টাকা জামানতে এক ব্যবসায়ীকে ভাড়া দিয়েছিলেন। ওই ব্যবসায়ী মার্কেটের অনেক দোকানমালিকের টাকাপয়সা নিয়ে পলাতক। এই ১১ লাখ টাকা দোকানের মালিক সিটি করপোরেশনের সাবেক কর্মকর্তাকে দোকানিদের বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য বলেন সমিতির লোকজন। কিন্তু তিনি টাকাও দেবেন না, আবার তিনি দোকানও খুলতে চান। তাই তিনি প্রভাব খাটিয়ে সিটি করপোরেশনের লোকজন নিয়ে আসেন। তাঁর কথামতো কাজ না করায় সিটি করপোরেশনের ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা ও প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা সমিতির প্রচার সম্পাদককে মারধর করেন এবং হুমকি দিয়ে যান।

তবে সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা লতিফুল হক কাজমী বলেন, দোকানের মালিক সিটি করপোরেশনের সাবেক এক কর্মকর্তা। ভাড়াটে চলে গেলেও তিনি দোকান খুলতে পারছিলেন না। সমিতির লোকেরা বাধা দিচ্ছিলেন। এ জন্য তিনি সিটি করপোরেশনের কাছে অভিযোগ দেন। মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে তাঁরা সেখানে যান। দোকান মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনা করছিলেন। কিন্তু এক লোক এসে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতে থাকেন। বারবার বলার পরও আঙুল তুলে উল্টো তাঁদের শাসাতে থাকেন। এ সময় হয়তো তাঁদের সঙ্গে থাকা কেউ দু–একটি চড়–থাপ্পড় দিয়ে থাকতে পারেন। এ ব্যাপারে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা রেজাউল করিমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশনের সিঙ্গাপুর–ব্যাংকক মার্কেটে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ একটি দোকানমালিককে বুঝিয়ে দিতে গিয়েছিলেন সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম ও প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী। ভাড়াটে দোকানমালিককে দোকান বুঝিয়ে না দিয়ে তালা দিয়ে চলে গেছেন। আর দোকান মালিক সমিতির কেউ কেউ মালিককে বাধা দিচ্ছিলেন। এ জন্য সিটি করপোরেশনের দুই কর্মকর্তা গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে দোকান মালিক সমিতির এক সদস্য তাঁদের বাধা দেন। এ সময় সেখানে ধাক্কাধাক্কি হয়। তবে কাউকে মারধর করা হয়েছে, এ রকম অভিযোগ কেউ করেননি। আর সরকারি কাজে কেউ বাধা দিতে পারেন না।