বাঙালি জাতির শাশ্বত ঐতিহ্যের প্রধান অঙ্গ পয়লা বৈশাখ: রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, বাঙালি জাতির শাশ্বত ঐতিহ্যের প্রধান অঙ্গ পয়লা বৈশাখ। আগামীকাল (১৪ এপ্রিল) বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আজ শনিবার দেওয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘শুভ নববর্ষ-১৪৩১। পয়লা বৈশাখ বাঙালি জাতির জীবনে একটি পরম আনন্দের দিন। আনন্দঘন এ দিনে আমি দেশে ও দেশের বাইরে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে জানাই বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, বৈশাখের আগমনে বেজে ওঠে নতুনের জয়গান। দুঃখ, জরা, ব্যর্থতা ও মলিনতাকে ভুলে সবাই জেগে ওঠে নব আনন্দে, নব উদ্যমে। ফসলি সন হিসেবে মোগল আমলে যে বর্ষ গণনার সূচনা হয়েছিল, সময়ের পরিক্রমায় তা আজ সমগ্র বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার এক স্মারক উৎসবে পরিণত হয়েছে। পয়লা বৈশাখের মাঝে বাঙালি খুঁজে পায় নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও চেতনার স্বরূপ।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘বৈশাখ শুধু উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আত্মবিকাশ ও বেড়ে ওঠার প্রেরণা। বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও মুক্তি সাধনায় পয়লা বৈশাখ এক অবিনাশী শক্তি। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও গণতান্ত্রিক বিকাশে সংস্কৃতির এই শক্তি রাজনৈতিকতন্ত্রের চেতনাকে দৃঢ় ও বেগবান করে।’
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ধর্ম-বর্ণ-গোত্রনির্বিশেষে সবাই মিলে নাচ-গান, শোভাযাত্রা, আনন্দ-উৎসব, হরেক রকম খাবার ও বাহারি সাজে বৈশাখকে বরণ করে নেয় উৎসবপ্রেমী বাঙালি জাতি। নতুন বছরে যাত্রাপালা, পুতুলনাচ, লোকসংগীত, গ্রামীণ খেলাধুলা, মেলাসহ নানাবিধ বর্ণিল আয়োজন মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয় আনন্দ ও সম্প্রীতির নতুন বার্তা।
২০১৬ সালে ইউনেসকো পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতীয় সংস্কৃতির এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি জাতি হিসেবে বাঙালির জন্য পরম গৌরব ও মর্যাদার উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাষ্ট্রদর্শন ও আদর্শের অন্যতম ভিত্তি ছিল দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশ ও জাতীয় চেতনার উন্মেষ। সেই চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বঙ্গবন্ধু কারারুদ্ধ জীবনে সহবন্দীদের নিয়ে নববর্ষ উদ্যাপন করেছিলেন।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘পয়লা বৈশাখ আমাদের উদার হতে শিক্ষা দেয় এবং জাতীয়তাবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বমানবের সঙ্গে মিশে যাওয়ার শক্তি জোগায়। এই উদারনৈতিক চেতনাকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রদর্শন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আদর্শ এবং রাষ্ট্রভাষা চেতনার বহ্নিশিখা অন্তরে ধারণ করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ হোক আজকের দিনে সকলের অঙ্গীকার।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সব অশুভ ও অসুন্দরের ওপর সত্য ও সুন্দরের জয় হোক। ফেলে আসা বছরের সব শোক-দুঃখ-জরা দূর হোক, নতুন বছর জাতীয় ও ব্যক্তিজীবনে নিয়ে আসুক অনাবিল সুখ ও সমৃদ্ধি—এই প্রত্যাশা করি।’