সমাজে এখনো অনেক কুসংস্কার রয়েছে। এ কারণে নারীরা অসুস্থ হলেও তা প্রকাশ করতে চান না। তাঁরা যখন প্রকাশ করেন, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত ৩৪ শতাংশ নারীই মারা যান। আগেভাগে স্তন ক্যানসার শনাক্ত করা গেলে মৃত্যু এড়ানো সম্ভব। তাই বাড়িতে বসে নিজেই পরীক্ষা করতে হবে।
বিশ্ব ক্যানসার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ নিয়ে এসব কথা বলেন বক্তারা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করা হয়। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক ছাত্রীকে ‘সেলফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশন’ প্রশিক্ষণ এবং ‘মুগ্ধতা স্মৃতি বৃত্তি’ দেওয়া হয়।
আলোচনা সভার প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ফাতেমা রেজিনা ইকবাল বলেন, ‘আমার পরিবারের কয়েকজন সদস্য ক্যানসারে মারা গেছেন। আমাদের সমাজে এখনো অনেক কুসংস্কার রয়েছে, যার কারণে নারীরা অসুস্থ হলেও তা প্রকাশ করতে চান না। যখন তাঁরা প্রকাশ করেন, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।’ নিজেকে ভালোবেসে নিজের শরীর নিজেরই পরীক্ষা করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্যানসার এপিডেমিওলজিস্ট (মহামারি বিশেষজ্ঞ) অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, ‘ক্যানসার প্রতিরোধে সচেতনতা প্রয়োজন। আমাদের আরও অনেক হাসপাতাল দরকার। একই সঙ্গে মনোজগতের পরিবর্তনও দরকার। নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে হবে।’
আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘প্রতিটি ক্যানসার ইউনিক (স্বতন্ত্র)। একেকজনের একেক রকম উপসর্গ থাকতে পারে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, যাতে এটি না ছড়ায়। এক লাখ মানুষের মধ্যে ৫৩ জন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। ৩৪ শতাংশ নারী স্তন ক্যানসারে মারা যান। নিজে পরীক্ষা করে আগেভাগে এটি শনাক্ত করা গেলে (ক্যানসার) এড়ানো সম্ভব।’
সামিনা লুৎফা বলেন, ক্যানসার আক্রান্ত পরিবারগুলো জানে এই বোঝা বহন করা কতটা কষ্টকর। নিজেরা পরীক্ষা করে সুস্থ থাকলে নিজের ও পরিবারের বোঝা কমবে।
চিকিৎসক এস এম শহিদুল্লাহ বলেন, ‘ক্যানসার আক্রান্ত না হলে আজকে এখানে যে সম্মান পেলাম, তা পেতাম না। আমার পরিবারের চারজন সদস্য ক্যানসারে আক্রান্ত। নিজেরা পরীক্ষা করলে ক্যানসার প্রতিরোধ করা যায়।’
ক্যানসারে মারা যাওয়া এক শিশুর মা সায়মা সাফীজ বলেন, ‘ক্যানসার আমার জীবনকে নতুনভাবে জানতে ও শিখতে শিখিয়েছে। আমাদের আগে থেকে সচেতন হতে হবে।’
অনুষ্ঠানের আয়োজক সেন্টার ফর ক্যানসার কেয়ার ফাউন্ডেশন (সিসিসিএফ) সভাপতি রোকশানা আফরোজ বলেন, ‘আমি একজন চতুর্থ পর্যায়ের ক্যানসার–যোদ্ধা। পরিবারের কাউকে হারানোর বেদনা যাঁরা বুঝেছেন, তাঁরাই জানেন, এটি কত কষ্টের। ক্যানসার আমার জীবনের একটি অংশ, পুরোটা নয়। ক্যানসারে চিকিৎসার চাইতেও মানসিক সমর্থন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
সভার শুরুতে ক্যানসার আক্রান্ত ১৪ বছরের শিশু ইমন হোসেন ও সামিয়া সুলতানার অভিভাবকদের হাতে ‘মুগ্ধতা স্মৃতি বৃত্তি’ তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিসিসিএফ সাধারণ সম্পাদক জাহান-ই-গুলশান। প্রশিক্ষণে সহযোগিতা করে হারমনি ট্রাস্ট।