ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কোনোমতেই বাতিল করা যায় না : আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক
ফাইল ছবি

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহাররোধে প্রয়োজন হলে তা সংশোধনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। কিন্তু এই আইনের প্রয়োজন রয়েছে। এই আইন কোনোমতেই বাতিল করা যায় না।

রাজধানীর মতিঝিলে আজ রোববার সকালে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠান শেষে আইনমন্ত্রী এই আইন নিয়ে কথা বলেন। এ ছাড়া আজ বিকেলে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরের সামনেও তিনি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।

ডিসিসিআই মিলনায়তনে অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকেরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিষয়ে সরকারের ভাবনা জানতে চান আইনমন্ত্রীর কাছে। উত্তরে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তিন দিন আগের ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে ভাবনার বিষয়ে নতুন করে বলার কোনো প্রশ্ন ওঠে না। এ বিষয়ে আমি আগেও যা বলেছি, এখনো তা বলছি। এটার কিছু অপব্যবহার হয়েছিল, সেটা স্বীকার করে এটার কী পরিবর্তন আনা যায়, সে জন্য আমরা প্রথমত জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের সাথে আলোচনা করেছি। এখনো সে আলোচনা চলছে। সেখান থেকে একটা কারিগরি নোট এসেছে। সেটা আমরা পর্যালোচনা (এক্সামিন) করছি, খুঁটিয়ে দেখছি। দ্বিতীয়ত, সাংবাদিকদের অহেতুক যাতে হয়রানি করা না হয়, সে জন্য একটা পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। তৃতীয়ত, গত ১৪ মার্চ সুধী সমাজের সঙ্গে এ আইন নিয়ে আলোচনায় বসেছিলাম। সেখানে তাদের বক্তব্য শুনেছি। পরে আমি তাদের বলেছিলাম যে আমার কিছু বক্তব্য আছে। সেগুলো শোনার কথা ছিল ৩০ মার্চ। কিন্তু এর আগের দিন তা স্থগিত করা হয়েছে।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এই আলোচনা হয়তো এপ্রিল মাসের মধ্যসময়ে হবে এবং সে সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ডেটা প্রটেকশন আইন (উপাত্ত সুরক্ষা আইন) এবং এনজিওদের ভলান্টিয়ারি ফান্ড নিয়ে কথা হবে।’

আনিসুল হক বলেন, ‘এই সব আলোচনার শেষে আমরা যদি দেখি, এই যে আমি অপব্যবহারের কথা বললাম, এগুলো রোধে যদি কোনো বিধি দ্বারা সম্ভব হয়, সেগুলো আমরা করব। অথবা আইনের সংশোধন যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে সংশোধনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের মেনে নিতে হবে বা এটা বাস্তবসম্মত যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজন আছে। পৃথিবীতে অনেক দেশেই এ ধরনের আইন আছে।’

প্রথম আলোর সম্পাদকের আগাম জামিন শুনানিতে আদালতের অপরাগতা প্রকাশ করার বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিচার বিভাগ সম্বন্ধে কিছু বলব না। বিষয়টা খুব স্পর্শকাতর (সেনসিটিভ)। তবে এর আগে আমরা এ–ও নজির দেখেছি যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় (শুনানিতে) সাতটি কোর্ট বিব্রত বোধ করেছিল।’

সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা ও তাঁকে তুলে নেওয়ার ব্যাপারে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনার ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এই বিষয়েও আমি মন্তব্য করতে চাই না। কিন্তু এ ব্যাপারে দুদিন আগেও বলেছি, আজও বলছি, এই সরকার কিন্তু সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধ মামলা করেনি বা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেনি। এই সরকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আপনাদের বিচার করতে হবে যে একটা শিশুর হাতে একটা প্ল্যাকার্ড তুলে দিয়ে ১০ টাকা দিয়ে তাকে দিয়ে দেশের কোনো মর্যাদাকে হেয়প্রতিপন্ন করা যায় কি না।’

‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়’

সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এই আইন কোনোমতেই বাতিল করা যায় না।

প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা এবং সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সাংবাদিকেরা সচিবালয়ে আইনমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে তিনি বিচারাধীন বিষয় বলে এ নিয়ে কথা বলতে চাননি।

আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আজ সচিবালয়ে বৈঠক করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এই বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকেরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’।