আশুগঞ্জের ইউএনওর বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ, ইজারাদারদের নামে মামলা

ইজারাদারেরা বালু উত্তোলন করতে গিয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাফে মোহাম্মদের হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এমন অভিযোগে শনিবার ভৈরব প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করা হয়ছবি: সংগৃহীত

মেঘনা নদীর কিশোরগঞ্জের ভৈরব বালুমহাল থেকে ইজারাদারেরা বালু উত্তোলন করতে গিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। চাহিদামতো চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় ইউএনও রাফে মোহাম্মদ হয়রানি করে যাচ্ছেন বলে জানান ইজারাদারেরা। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভৈরব প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ইজারাদারেরা সংবাদ সম্মেলন করে ওই অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মেঘনার ভৈরব বালুমহালের ইজারাদার মেসার্স নাগিব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী তানভির আহমেদ নাগিব। তিনি ভৈরব উপজেলা বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের ছোট ভাই। এর আগে বুধবার একই স্থানে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে একই অভিযোগ করেন তিনি। এ ছাড়া হয়রানি ও চাঁদা দাবির অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার ইজারাদার তানভির আহমেদ কিশোরগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ইউএনওর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। রোববার আদালতে অভিযোগের ওপর শুনানি হওয়ার কথা আছে।

এ দিকে গত মঙ্গলবার ইউএনও রাফে মোহাম্মদের গাড়িচালক মমিন মিয়া বাদী হয়ে ইজারা প্রতিষ্ঠানের সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় সরকারি কাজে বাধা ও ইউএনওকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। প্রধান অভিযুক্ত করা হয় ইজারাদারদের একজন তারেক মিয়াকে।

শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মেঘনার ভৈরব বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলনের জন্য মেসার্স নাগিব এন্টারপ্রাইজ গত ১৪ মে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকে ১৬ কোটি ৯৪ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকায় ইজারপ্রাপ্ত হয়। ইজারা এলাকা ১, ৬১০.২৫৮ একর নদী। নির্দিষ্ট এলাকা থেকে ৯ কোটি ১৩ লাখ ৮৪ হাজার ৯৬৫ ঘনফুট বালু তোলার অনুমতি রয়েছে। ইজারাপ্রাপ্ত হওয়ার পর নির্দিষ্ট বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নদীর এক প্রান্ত ভৈরব, অপর প্রান্ত আশুগঞ্জ। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আশুগঞ্জের ইউএনও প্রায়ই নদীতে অভিযান চালান। তাঁর অবৈধ অভিযানের কারণে স্বাভাবিক বালু উত্তোলন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ পর্যন্ত একাধিক অভিযান চালিয়ে ইউএনও তাঁদের ১৪টি ড্রেজার মেশিন ও একটি বাল্কহেড জব্দ করেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ভোরে অভিযান চালিয়ে সীমানা লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে চারটি খননযন্ত্র ও পাঁচটি বাল্কহেড জব্দ করেন। দুজন লোক ধরে নিয়ে এক বছর করে সাজা দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার অভিযানের সময় ড্রেজারে থাকা ১১ লাখ টাকা নেন ইউএনও। সব মিলিয়ে অনেক টাকার আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন তাঁরা। ইউএনও তাঁদের জানিয়েছেন, বৈধভাবে ইজারাপ্রাপ্ত হলেও ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে তাঁকে দিনে এক লাখ টাকা করে দিতে হবে। তাঁদের পক্ষে এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। এ কারণেই সীমানা লঙ্ঘনের মিথ্যা অভিযোগ এনে বারবার তাঁদের হয়রানি করা হচ্ছে।

চাঁদা দাবির প্রমাণ আছে কি না জানতে চাইলে ইজারাদার তানভির আহমেদ বলেন, ইউএনও প্রমাণ রেখে কিছু করেন না। প্রমাণ না রেখে অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। এসব কাজ অতীতে যেভাবে হতো, এখন সেভাবেই হচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও রাফে মোহাম্মদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভৈরবের নির্ধারিত বালুমহাল ছেড়ে সীমানা লঙ্ঘন করে আশুগঞ্জ প্রান্ত থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছিল। এতে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের টাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। মূলত টাওয়ার রক্ষায় অভিযান চালানো হয়। ইজারাদারের লোকজন আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে, জোর করে ড্রেজার ছাড়িয়ে নেয়। আমাকে হত্যার হুমকিও দেয়। এই কারণে সাতজনের নাম উল্লেখ করে আশুগঞ্জ থানায় নিয়মিত মামলা করা হয়।’

ড্রেজার মেশিন ছিনিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, নদী থেকে ড্রেজার মেশিন ছিনিয়ে নেওয়া অসম্ভব। ইউএনও মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন। সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা হলো, একদিকে টাওয়ার ঝুঁকিমুক্ত রাখার কথা বলা হচ্ছে; অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন দরপত্র ছাড়া আশুগঞ্জ প্রান্ত থেকে বালু তোলার অনুমতি দিয়েছে একটি মহলকে। দিনে ১৮টি ড্রেজারের মাধ্যমে বালু তোলা হচ্ছে।