বাংলাদেশে মানবাধিকার সমুন্নত রাখার পাশাপাশি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের গুরুত্বের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র আবারও পুনর্ব্যক্ত করেছে। মার্কিন ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট ওয়েন্ডি আর শারমেন গতকাল শুক্রবার ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থানের কথা জানান।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস এ তথ্য জানিয়েছেন। এই বৈঠকে যে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় এসেছে, তা আজ শনিবার ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতেও উল্লেখ করা হয়।
আলোচনার শুরুতে ওয়েন্ডি শারমেন সম্প্রতি মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বিশ্বে শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বাংলাদেশের করোনার টিকাদান কর্মসূচি এবং মহামারি মোকাবিলা ও নিয়ন্ত্রণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপেরও প্রশংসা করেন। সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা পুনর্ব্যক্তও করেন তিনি।
বাংলাদেশের শ্রম খাতে অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে মার্কিন ডেপুটি সেক্রেটারি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের ওপর গুরুত্ব দেন। ইউক্রেন যুদ্ধ এবং খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়গুলোও আলোচনায় স্থান পায়।
বৈঠকে র্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম যত দ্রুত সম্ভব এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে মার্কিন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে অবিলম্বে ফেরত পাঠানোর জন্য মার্কিন সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, বিষয়টি বাংলাদেশের জনগণ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব বহিঃসমর্পণ চুক্তি সম্পাদনের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রতিমন্ত্রী।
শাহরিয়ার আলম করোনা মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে প্রায় ৮ কোটি ৮০ লাখ করোনার টিকা সহায়তা দেওয়ার জন্য মার্কিন সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহায়তা এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার আন্তরিক প্রশংসা করেন।
স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) সম্পর্কিত বিষয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) মার্কিন সহায়তা কামনা করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, যাতে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো সুষ্ঠু এবং টেকসইভাবে স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন এবং অভিবাসন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের ইচ্ছা তুলে ধরেন।
আসন্ন ২৭তম জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে জলবায়ু–সংশ্লিষ্ট ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে একটি কর্মমুখী আলোচনার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ও হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল এইলেন লবাখের শুক্রবার ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ-মার্কিন সহযোগিতা, র্যাবের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।