চীনের অনিয়ন্ত্রিত প্রভাব ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরে অস্থিতিশীলতা বাড়াতে পারে: পিটার হাস

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনের’ এক কর্ম অধিবেশনে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ৯ অক্টোবর
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

চীনের নিয়ন্ত্রণহীন প্রভাব ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব ও কৌশলগত স্বায়ত্ত শাসনকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি বলেছেন, ‘এই প্রভাবের (চীনের) কারণে এ অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সম্মিলিতভাবে আমরা যে সমৃদ্ধি অর্জন করতে চাই, তা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।’

রাজধানীর একটি হোটেলে আজ সোমবার ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনের’ এক কর্ম অধিবেশনে দেওয়া বক্তৃতায় পিটার হাস এ কথা বলেন। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত তিন দিনের এই সম্মেলনে তিনি ‘ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রতিযোগিতা’ শীর্ষক অধিবেশনে বক্তৃতা করেন।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, ‘ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নৌপথে অবাধ চলাচল এবং উন্মুক্ততার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল এই অঞ্চলে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং সমৃদ্ধির প্রচারেও বিশ্বাস করে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমরা যখন সামনের দিকে এগোচ্ছি, তখনো চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিষয়টি যাতে দৃষ্টিসীমা থেকে না হারাই।’

মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘চীনের অঞ্চল ও পথের উদ্যোগ (বিআরআই) এবং সমুদ্রপথে বিস্তৃত আকাঙ্ক্ষা এই অঞ্চলে একটি নতুন যুগের ইঙ্গিত দিয়েছে। এটি উন্মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সামনে সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে। কর্তৃত্ববাদী শক্তি আন্তর্জাতিক বিষয়ে মৌলিক নিয়ম পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। এই সন্ধিক্ষণে আমাদের অবশ্যই বাড়তি সতর্কতার সঙ্গে এগোতে হবে।’

পিটার হাস বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়া নৃশংস ও বিনা উসকানিতে যে আগ্রাসন চালিয়েছে, তাতে বিশ্ব জেগে উঠেছে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দায়িত্বশীল নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্র হিসেবে ভূমিকা পালন করবে। আমরা সংঘাত চাই না। আমরা শীতল যুদ্ধ চাই না।’
‘সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে বলা মানেই আধিপত্য বিস্তার নয়’

প্রশ্নোত্তর পর্বে পিটার হাস বলেন, বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কথা বলা আধিপত্য বিস্তার নয়, এটা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাভাবিক পররাষ্ট্রনীতি।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলেন, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্বাধীনতা ও উন্মুক্ততার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে। যুক্তরাষ্ট্রের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (আইপিএস) এই অঞ্চলে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং সমৃদ্ধির প্রচারেও বিশ্বাস করে। কেউ কেউ মনে করেন গণতন্ত্র, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র আধিপত্য বিস্তার করে। এটা মূলত সারা বিশ্বের মানবাধিকারের জন্য মৌলিক অধিকার। এই বিষয়টা বলা কখনোই আধিপত্য নয়, এটা গুরুত্বপূর্ণ।

ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতার বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে পিটার হাস, ‘প্রতিযোগিতা শব্দটা মূলত চীনের বিরুদ্ধে যায়। আমার পুরো বক্তব্যে সংঘাতের কথা বলা হয়নি। যে প্রতিযোগিতার কথা বলছি, সেটা মূলত চিন্তার ধারাকে ঘিরে। এটা এমন নয় যে এখানে বলপ্রয়োগ করতে হবে; যেখানে প্রতিটি দেশ স্বচ্ছতার কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে, মানবাধিকারের কথা বলে, বেসরকারি খাতের কথা বলে। যুক্তরাষ্ট্র মূলত ওই সব ধারণার জায়গায় প্রতিযোগিতা করে, যেখানে একনায়কতন্ত্র চলে। এখানে বাংলাদেশের কথা বললে তারা পূর্ব বা পশ্চিম কাকে অনুসরণ করবে, সেটা বিষয় নয়। বিষয় হচ্ছে, তারা আমাদের ওই ধারণা বিশ্বাস করে কি না বা একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাস করে। তবে বাংলাদেশ কী করবে, সেই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশই নেবে।

সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় কর্ম অধিবেশনে আরও বক্তৃতা করেন যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক, কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস ও অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার।