অনলাইন জুয়া নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন চায় পুলিশ

পুলিশ সপ্তাহের পঞ্চম দিনে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে তিন মন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা। ঢাকা, ২ মার্চছবি: ডিএমপি নিউজের সৌজন্যে

প্রকাশ্যে সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে জুয়া খেলা হলে ১৮৬৭ সালের পাবলিক জুয়া আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু অনলাইনে জুয়া খেলা হলে এই আইনে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। তাই অনলাইনে জুয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন আইন চান পুলিশ কর্মকর্তারা।

আজ শনিবার দুপুরে পুলিশ সপ্তাহ-২০২৪–এর পঞ্চম দিনে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে তিন মন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় নতুন আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা।

সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। সভায় পুলিশ সুপার পদমর্যাদা থেকে ঊর্ধ্বতন পদমর্যাদার কর্মকর্তারা অংশ নেন। আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা পৌনে ২টা পর্যন্ত এই সভা চলে।

সভায় উপস্থিত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মন্ত্রী ও সচিবদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, অনলাইন জুয়া নিয়ন্ত্রণে নতুন আইন করা হলে তা হবে যুগোপযোগী হবে। আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িতদের আটক করা হলে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক মামলা করা যায় না। কারণ, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রুজু করতে সরকারের অনুমোদন নিতে হয়। এতে দীর্ঘ সময় লাগে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রুজু করতে প্রক্রিয়া যাতে সহজ ও কম সময় লাগে, সেই ব্যবস্থা নিতে তিনি মন্ত্রী ও সচিবদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সভা সূত্র জানায়, পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, নানা প্রয়োজনে পুলিশ সদস্যদের ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের বাসভবনে সমবেত হতে হয়, বৈঠক করতে হয়। মাঝে মাঝে স্থান সংকুলান হয় না। তাই ডিএমপি কমিশনারের জন্য নতুন বাসভবন জরুরি।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা মন্ত্রী ও সচিবদের উদ্দেশে বলেন, আইজিপিকে কেনাকাটার ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষমতা সচিবের সমমানের দিতে হবে। প্রশাসন ক্যাডারের উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত ঋণ নিয়ে গাড়ি কেনার সুযোগ রয়েছে। পুলিশের সমমানের কর্মকর্তারাও এই সুযোগ দিতে হবে।

একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা সভায় বলেন, অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসে নিয়মিত পদায়ন হলেও পুলিশে পদোন্নতি-জট আছে। তাঁরা পদোন্নতির উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান। এ ছাড়া পদোন্নতি-জট কমাতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) ১৪০ এবং পুলিশ সুপার (এসপি) পদে ১৫০ জনকে সুপারনিউমারারি (সংখ্যাতিরিক্ত পদ) পদোন্নতি দেওয়া হয়। তবে এখনো তাঁদের পদায়ন করা যায়নি। ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৪ জনকে অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, যাঁদের মধ্যে ১০ জনই সুপারনিউমারারি। তাঁদের পদায়নের দাবি জানান কর্মকর্তারা।

পুলিশের আরেক কর্মকর্তা বৈঠকে বলেছেন, পুলিশের পদোন্নতি কমিটি এসএসবিতে (সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড) টেকনোক্র্যাট সদস্য হিসেবে আইজিপিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

সভায় উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, আইনসচিব গোলাম সারওয়ার, গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মানজুরুল মান্নান।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বৈঠক বাস্তবায়ন উপকমিটির সভাপতি ও অতিরিক্ত আইজিপি দেবদাস ভট্টাচার্য।

মতবিনিয়ম সভার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র ইনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রীরা পুলিশ কর্মকর্তাদের কথাগুলো ধৈর্য ধরে শোনেন। যৌক্তিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী তাঁদের উদ্দেশে বলেন, রাজারবাগে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালি পুলিশ সদস্যরা প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। তিনি সেসব পুলিশ সদস্যের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

সভায় উপস্থিত ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আরও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। সভায় প্রস্তাবিত বিষয়গুলো গুরুত্বসহ বিবেচনা করবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত স্বাভাবিক থাকার কারণে দেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবিত বিভিন্ন বিষয়গুলোকে যৌক্তিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এসব বিষয় বিবেচনায় অত্যন্ত আন্তরিক।

আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ কখনো পেশাদারত্ব থেকে বিচ্যুত হয়নি। দেশের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার জন্য, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত রয়েছে। আইজিপি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাবিত বিভিন্ন বিষয়ের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন।