পেয়ারাবাগান ঘিরে পর্যটন

আটঘর কুড়িয়ানা খালে নৌকায় চলে পেয়ারার বিকিকিনি
ছবি: প্রথম আলো

সুমিষ্ট পেয়ারার জন্য পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানার খ্যাতি দেশজুড়ে। বর্ষাকাল বাংলার আপেলখ্যাত পেয়ারার ভরা মৌসুম। এ সময়ে সন্ধ্যা নদীর শাখা আটঘর কুড়িয়ানা খালে নৌকায় চলে পেয়ারার বিকিকিনি। পেয়ারার এই ভাসমান হাট ও বাগান ঘিরে দিন দিন বাড়ছে পর্যটকের আনাগোনা।

আটঘর কুড়িয়ানা খালের ভাসমান পেয়ারার হাট দেখে পর্যটকেরা নৌপথে যাচ্ছেন ঝালকাঠির ভীমরুলি ভাসমান হাটে। এই তিন কিলোমিটার নৌপথের দুই ধারে রয়েছে বহু পেয়ারাবাগান। এসব বাগানের কয়েকটিতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তোলা হয়েছে বিনোদনকেন্দ্র ও পিকনিক স্পট। পর্যটকেরা এসব বিনোদনকেন্দ্রে যাত্রাবিরতি করেন।

পাঁচ বছর আগে কঠুরাকাঠি গ্রামে ১০ একর পেয়ারা বাগান বন্দোবস্ত নিয়ে তিন ভাই গড়ে তুলেছেন ন্যাচারাল ট্যুরিজম অ্যান্ড পিকনিক স্পট। পাশের আদমকাঠি গ্রামেও রয়েছে দুটি বিনোদনকেন্দ্র। দুই বছর আগে এ গ্রামে তিন একর জমিতে যাত্রা শুরু হয় রিয়ান পেয়ারা পার্কের।

পেয়ারাবাগান ও ভাসমান হাট ঘিরে দিন দিন বাড়ছে পর্যটকের আনাগোনা
প্রথম আলো

গ্রামটির আরেক বিনোদনকেন্দ্রের নাম ফ্লোটিং পেয়ারা পার্ক। একইভাবে ঝালকাঠির ভীমরুলি পেয়ারার ভাসমান হাটের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে গৌরব ইকো পেয়ারা পার্ক। এসব বিনোদনকেন্দ্রে ঢুকতে লাগে ২০ থেকে ৪০ টাকা। এগুলোর ভেতরে রয়েছে হোটেল, বিশ্রামের ব্যবস্থা ও পিকনিক করার সুবিধা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, জুলাই ও আগস্ট—এ দুই মাস পর্যটকদের ভিড়ে মুখর থাকে বিনোদনকেন্দ্রগুলো। শীত মৌসুমেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক দূর-দূরান্ত থেকে আসেন। পেয়ারার মৌসুমে প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার দর্শনার্থী আসেন উল্লেখ করে গৌরব ইকো পেয়ারা পার্কের ব্যবস্থাপক দীপঙ্কর ঢালী বলেন, ছুটির দিনে তা বেড়ে পাঁচ থেকে সাত হাজারে দাঁড়ায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, আটঘর থেকে ভীমরুলি পর্যন্ত আকারভেদে ট্রলারে ভাড়া এক থেকে তিন হাজার টাকা। ছোট নৌকায় ভাড়া ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। আটঘর থেকে ভীমরুলিতে সড়কপথেও যাওয়া যায়। জেলা সদর থেকে সড়কপথে আটঘর কুড়িয়ানার দূরত্ব ৪১ কিলোমিটার। বরিশাল থেকে দূরত্ব ২৯ কিলোমিটার।

রাজধানীর কমলাপুর থেকে পেয়ারাবাগানে বেড়াতে আসা অনিক হাসান (১৭) প্রথম আলোকে বলে, তারা ৩০ বন্ধু পেয়ারাবাগান ও ভাসমান হাট দেখতে এসেছে। তিন হাজার টাকায় একটি ট্রলার ভাড়া করা হয়েছে। সারা দিন ঘুরবে তারা।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়ন এবং পার্শ্ববর্তী জলাবাড়ি ও সমুদয়কাঠি ইউনিয়নের ২২টি গ্রামের ৬৫৭ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ২৫টি পেয়ারার বাগান রয়েছে। শত বছর ধরে গ্রামগুলোতে বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারা চাষ করা হচ্ছে।

পেয়ারাবাগান ও ভাসমান হাটকে ঘিরে পর্যটন বিকাশের আশা করছেন এলাকাবাসী। আটঘর কুড়িয়ানা ইউপি চেয়ারম্যান মিঠুন হালদার প্রথম আলোকে বলেন, পর্যটক আসায় স্থানীয়দের জন্য কর্মসংস্থান হচ্ছে। তবে এখানে থাকার জন্য হোটেল বা মোটেল নেই। আধুনিক পর্যটনকেন্দ্রে গড়ে তোলার জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর যোগাযোগ সহজ হওয়ায় পেয়ারার বাগানগুলোতে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে উল্লেখ করে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।