২০-২৫ হাজার টাকার টিকিটের দাম লাখ ছাড়িয়েছে

প্রতীকী ছবি

মালয়েশিয়া যেতে বাংলাদেশি নতুন কর্মীদের সময় শেষ হচ্ছে ৩১ মে। কর্মীদের তাড়াহুড়ার সুযোগে অধিকাংশ উড়োজাহাজ চড়া দামে টিকিট বিক্রি করেছে। কর্মীদের সুবিধার্থে চারটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করছে একমাত্র সরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা বাংলাদেশ বিমান। তবে এসব ফ্লাইটের টিকিট নিয়ে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রতি টিকিটের দাম প্রায় পাঁচ গুণ বেড়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর যেতে উড়োজাহাজের টিকিটের সর্বোচ্চ দাম থাকে সাধারণত ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। চলতি মাসের শুরু থেকেই তা তিন গুণের বেশি হয়ে গেছে। মাসের মাঝামাঝি সময়ে এটি ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা হয়ে যায়। এখন আর কোনো উড়োজাহাজের আসন ফাঁকা নেই। বিমানের বিশেষ ফ্লাইটের টিকিটের দামও এক লাখ টাকা ছাড়িয়েছে।

বিমানের টিকিট বাণিজ্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অভিযোগ করেছেন ফারিয়েল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইথার ফারিয়েল হামিদ। ২৬ মে পাঠানো অভিযোগে বলা হয়, মালয়েশিয়া যেতে বিমানের ঘোষিত বিশেষ ফ্লাইটে সরাসরি টিকিট করতে পারছে না এজেন্সি। গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমে (জিডিএস) ফ্লাইটের টিকিট দেখাচ্ছে না। এ সুযোগে বিমানের কর্মকর্তারা দুর্নীতি করছেন। এতে টিকিটের দাম এক লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন।

ইথার ফারিয়েল প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি টিকিটে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা ঘুষ দিলে জিডিএসে টিকিট উন্মুক্ত করা হচ্ছে। মালয়েশিয়া যেতে টিকিটের দাম ১ লাখ ৫ হাজার থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ বিমান সূত্র বলছে, মালয়েশিয়া থেকে ফেরার সময় খালি ফ্লাইট আসবে বলে বাড়তি দাম ধরা হয়েছে। বিশেষ ফ্লাইটের টিকিট ৬৮ হাজার থেকে শুরু করেছে বিমান। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এটি অনলাইন থেকেও কেনার সুযোগ রাখা হয়েছিল। এ ছাড়া আরও চারটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য গত রোববার মালয়েশিয়াকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার বিকেল চারটা পর্যন্ত মালয়েশিয়ার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো জবাব আসেনি।

গতকাল রোববার ও আজ বিমানের ওয়েবসাইটে ঢুকে কয়েক দফায় চেষ্টা করেও টিকিট পাওয়া যায়নি। ২৭ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সব টিকিটি ‘সোল্ড আউট’ দেখাচ্ছে, মানে সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।

বিমানের বিপণন ও বিক্রয় পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘চার দিন আগে ঘোষণা দিয়ে বিশেষ ফ্লাইটের টিকিট উন্মুক্ত করা হয়েছে। ৯৯ শতাংশ টিকিট জিডিএস থেকেই বিক্রি হয়েছে। ঘুষ কাকে দিয়েছে জানালে ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হবে। টিকিটের দাম এক লাখের বেশি নিলে ওই এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করা উচিত।’

প্রায় চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালের জুলাইয়ে নতুন করে চালু হয় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। এরপর এখন পর্যন্ত সাড়ে চার লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়া গেছেন। কর্মী পাঠানো নিয়ে অনিয়ম, দেশটিতে গিয়ে কর্মীদের চাকরি না পাওয়া ও শ্রমশোষণের অভিযোগ করেছে একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা। এতে আবারও শ্রমবাজার বন্ধ করে দিয়েছে মালয়েশিয়া। তবে ইতিমধ্যে অনুমোদিত কর্মীদের দেশটিতে যেতে ৩১ মে পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এতে চলতি মাসে উড়োজাহাজ টিকিটের চাহিদা বেড়ে যায়।

বাংলাদেশে মালয়েশিয়া যাওয়ার টিকিটের দাম এমনিতেই বেশি। ভারতের কলকাতা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর যেতে সময় লাগে চার ঘণ্টা। একই গন্তব্যে যেতে ঢাকা থেকে সময় লাগে ৩ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট। স্বাভাবিক সময়েই ঢাকা থেকে সবচেয়ে কম দামে মালয়েশিয়া যেতে টিকিট মেলে ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকায় আর কলকাতা থেকে টিকিট পাওয়া যায় ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। তার মানে, সব সময়ই টিকিটের দাম বেশি থাকে। এখন সংকটের সুযোগ নিয়ে চড়া দামে টিকিট বিক্রি করেছে সরকারি–বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা।

বিদেশে কর্মী পাঠানো রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা) বলছে, এমনিতেই মালয়েশিয়া যেতে নির্দিষ্ট এজেন্সির সিন্ডিকেটের কারণে কর্মীদের বাড়তি খরচ হচ্ছে। একজন কর্মী সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করছেন। এর মধ্যে টিকিটের অস্বাভাবিক দাম খরচ আরও বাড়িয়ে দেয়। টিকিট সংগ্রহ করে শেষ পর্যন্ত সব কর্মী পাঠানো যাবে কি না, তা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা আছে।

উড়োজাহাজের টিকিট বিক্রি করার এজেন্সিগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্সিজ অব বাংলাদেশ (আটাব) বলছে, উড়োজাহাজগুলো জ্বালানি খরচের কথা বলে টিকিটের বাড়তি দাম রাখে। বিভিন্ন উৎসবের সময় এটি আরও বাড়িয়ে দেয়। রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থা বিমানের টিকিটের দাম বাড়লে তার সুযোগ নেয় সব বেসরকারি ও বিদেশি উড়োজাহাজ সংস্থা। চলতি মাসে মালয়েশিয়ায় কী পরিমাণ কর্মী যাবে, তা আগেই প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে জানানোর দরকার ছিল। এতে উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো বাড়তি প্রস্তুতি নিতে পারত। এখন অনেকেই টিকিট পাচ্ছে না। মালয়েশিয়ায় বাড়তি ফ্লাইট দিতে উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছে আটাব।

আটাবের সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন এজেন্সি আটাবের কাছে অভিযোগ করেছে, বিমানের বিশেষ ফ্লাইটের টিকিট জিডিএস থেকে কিনতে পারছে না। ৩০ হাজার টাকার টিকিট ১ লাখ টাকা হতে পারে না। এটা যাত্রীদের ওপর জুলুম।