বাড়তি চাহিদা দিলেও তেল কম নিচ্ছে পিডিবি

ক্ষতিপূরণের শঙ্কায় বিপিসি। দ্রুত তেল নেওয়ার নির্দেশনা দিতে সর্বশেষ ২২ এপ্রিল জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে চিঠি।

বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত জ্বালানি তেল ফার্নেস তেলের চাহিদা হঠাৎ করেই বাড়িয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। চাহিদা অনুসারে তেল সরবরাহ করতে আমদানি বাড়িয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। কিন্তু পিডিবি তেল নিচ্ছে চাহিদার চেয়ে অনেক কম। এতে করে জাহাজ থেকে তেল খালাস নিয়ে জরিমানার শঙ্কায় বিপিসি।

চিঠি দিয়ে বারবার তাগাদা দিলেও তাতে তেমন সাড়া দিচ্ছে না পিডিবি। সর্বশেষ ২২ এপ্রিল জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে একটি চিঠি দিয়েছে বিপিসি। এতে বলা হয়, জাহাজ থেকে তেল খালাসে দেরির কারণে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হতে পারে। এটি এড়াতে এপ্রিলের অবশিষ্ট কয়েক দিনের মধ্যে ৪০ হাজার টন ও মে মাসে ১ লাখ টন ফার্নেস তেল গ্রহণে পিডিবিকে নির্দেশ দিতে অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।

বিপিসি সূত্র বলছে, জ্বালানি তেল আমদানির জন্য আগে থেকেই বিদেশি সরবরাহকারীদের সঙ্গে চুক্তি করতে হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্র তেল না নিলে চুক্তি অনুসারে আমদানি করা কঠিন হয়ে যায়। এতে চাইলে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে সরবরাহকারীরা। ২০২৫ সালে ১২ লাখ ৩৯ হাজার ২৩১ টন ফার্নেসের চাহিদা জানিয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর বিপিসিকে চিঠি দেয় পিডিবি। গত মার্চে চাহিদা তিন গুণ বাড়িয়ে ৩৫ লাখ ৫১ হাজার ৪৮ টনের কথা জানায় পিডিবি।

পিডিবি তেল নিচ্ছে চাহিদার চেয়ে অনেক কম। এতে করে জাহাজ থেকে তেল খালাস নিয়ে জরিমানার শঙ্কায় বিপিসি।

পিডিবির চাহিদা ও তেল গ্রহণের একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয় বিপিসির চিঠিতে। গত জানুয়ারিতে পিডিবির চাহিদা ছিল ৬৫ হাজার ৫৭৭ টন, তারা নিয়েছে ১৮ হাজার ৪৩৪ টন। ফেব্রুয়ারিতে ৬৫ হাজার ২৬০ টনের বিপরীতে নিয়েছে ৪৬ হাজার ২৮০ টন। বর্ধিত চাহিদা অনুসারে মার্চ থেকে প্রতি মাসে তাদের নেওয়ার কথা ৫ লাখ ৭ হাজার ২৯২ টন। তারা নিয়েছে ৬৯ হাজার ২১২ টন।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্ব দিয়ে পিডিবির চাহিদা অনুসারে সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মজুতের সক্ষমতা কম থাকায় চাহিদা অনুসারে তেল না নিলে জটিলতা তৈরি হয়। পিডিবি বলেছে, দ্রুত তেল খালাসের ব্যবস্থা করবে। এটি হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মতো পরিস্থিতি এড়ানো যাবে।
মো. আমিন উল আহসান, চেয়ারম্যান, বিপিসি

এর আগে বিপিসির চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি ভিত্তিতে ফার্নেস তেল গ্রহণ করতে ১৯ এপ্রিল বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে একটি চিঠি পাঠায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে পিডিবির কাছেও। এতে বলা হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতি মাসে ৭৫ হাজার থেকে ১ লাখ টন ফার্নেস অয়েল আমদানি করছে বিপিসি। তবে তারা (পিডিবি) নিয়মিত তেল গ্রহণ না করায় তেল খালাসের পর্যাপ্ত স্থান সংকুলান করা যাচ্ছে না। জাহাজ অপেক্ষায় রাখা হলে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বিপিসির। এ ছাড়া ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) দিনে ১ হাজার ১০০ টন ফার্নেস অয়েল সরবরাহ করে। এটিও নিতে পারবে না বিপিসির তেল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো। এতে করে ইআরএলের উৎপাদন বন্ধ হতে পারে। তাই ২০ এপ্রিলের মধ্যে অন্তত ২৫ হাজার টন তেল নিতে পিডিবিকে নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ করা হয়।

পিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র অনেক সময় বাড়তি চাহিদা দেয়। আবার বিদ্যুৎ চাহিদাও বাড়ে-কমে। তেলচালিত কেন্দ্র কম চালালে খরচ কমে। এ রকম নানা হিসাব-নিকাশ করে তেল নিতে হয়। সব সময় প্রক্ষেপিত চাহিদা অনুসারে নেওয়া যায় না। বিপিসির চিঠির পর তাদের জাহাজ খালাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চাহিদার পরিকল্পনাতেও ঘাটতি থাকতে পারে। তাই এটি পুনরায় যাচাই–বাছাই করে শিগগিরই বিপিসিকে নতুন করে চাহিদা জানানো হবে।

তবে বিপিসি সূত্র বলছে, জ্বালানি বিভাগের চিঠির পর ১৯ ও ২০ এপ্রিল মাত্র ৫ হাজার টন তেল নিয়েছে পিডিবি। ২১ এপ্রিল পর্যন্ত এ মাসে পিডিবি মোট তেল নিয়েছে ৩৫ হাজার ৪২৮ টন।

বিপিসির চিঠি বলছে, আগামী ২৬ থেকে ২৮ এপ্রিলের মধ্যে ২৫ হাজার টন ফার্নেস নিয়ে একটি জাহাজ আসার কথা রয়েছে। একই পরিমাণ তেল নিয়ে পরবর্তী জাহাজ আসার কথা ৫ থেকে ৭ মে, পরেরটি ১৭ থেকে ১৯ মে ও তার পরেরটি ২৮ থেকে ৩০ মে। ফলে পিডিবির দ্রুত তেল গ্রহণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় বিলম্বজনিত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, যা পিডিবির শোধ করা লাগবে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নিজেরা তেল আমদানি করলে ৯ শতাংশ সার্ভিস চার্জ পেত। সম্প্রতি এটি কমিয়ে ৫ শতাংশ করেছে সরকার। এর পর থেকে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র তেল আমদানি করবে না বলে জানিয়েছে পিডিবিকে। এরপর পিডিবি চাহিদা বাড়িয়েছে।

৮ এপ্রিল বিপিসির পাঠানো আরেকটি চিঠিতে বলা হয়, অধিকাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সিংহভাগ তেল আমদানি করে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে কিংবা ঋণপত্র খোলায় জটিলতা তৈরি হলে বিপিসির কাছ থেকে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে। ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট চাহিদার মাত্র ১২ শতাংশ নিয়েছে বিপিসির কাছ থেকে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে নিয়েছে ২২ শতাংশ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নিয়েছে ৪৪ শতাংশ। যদিও গত তিন বছরেই চাহিদার চেয়ে কম তেল নিয়েছে পিডিবি।

বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২২ সালে দেশে ডলার–সংকট শুরুর পর তারা (পিডিবি) বিপিসি থেকে তেল নেওয়া বাড়িয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নিজেরা তেল আমদানি করলে ৯ শতাংশ সার্ভিস চার্জ পেত। সম্প্রতি এটি কমিয়ে ৫ শতাংশ করেছে সরকার। এর পর থেকে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র তেল আমদানি করবে না বলে জানিয়েছে পিডিবিকে। এরপর পিডিবি চাহিদা বাড়িয়েছে।

বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্ব দিয়ে পিডিবির চাহিদা অনুসারে সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মজুতের সক্ষমতা কম থাকায় চাহিদা অনুসারে তেল না নিলে জটিলতা তৈরি হয়। পিডিবি বলেছে, দ্রুত তেল খালাসের ব্যবস্থা করবে। এটি হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মতো পরিস্থিতি এড়ানো যাবে।