নির্বাচন বাতিলের দাবিতে অবস্থান নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র
৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করে নির্দলীয় সরকার গঠন ও সর্বজনীন ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ চার দফা দাবিতে একক অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র। এই নির্বাচনকে ‘একদলীয় সরকারের অধীনে প্রহসনের নির্বাচন’ আখ্যা দিয়ে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি৷
এই শিক্ষার্থীর নাম আকাশ বিশ্বাস। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। আজ শনিবার বিকেল চারটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে তিনি এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।
আকাশ বিশ্বাসের অন্য তিন দাবি হলো জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া চালু করা; গুম-খুন-নির্যাতনের বিচার ও শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি দেওয়া, সব নাগরিকের নাগরিক অধিকার ও মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করা এবং রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিসর সংকোচন বন্ধ করা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
আজ সন্ধ্যায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গিয়ে দেখা যায়, দাবিসংবলিত ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও প্রচারপত্র নিয়ে একাই সেখানে অবস্থান করছেন আকাশ বিশ্বাস। প্রথম আলোকে বলেন, বিকেল চারটায় কর্মসূচি শুরু করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির পক্ষ থেকে কয়েকজন এসে ‘নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় না হওয়ায়’ তাঁকে সরে যেতে অনুরোধ করেন। আকাশ বলেন, ‘আমি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নই, একজন সাধারণ বিক্ষুব্ধ নাগরিক ও ছাত্র৷ ব্যক্তিগত জায়গা থেকেই আমি এখানে বসেছি৷ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমার কর্মসূচি চলবে।’
প্রচারপত্রে আকাশ বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের নাগরিকেরা তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি৷ আবারও একই রকম একটি নির্বাচন সামনে হতে যাচ্ছে, যেখানে নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনর্বার ভূলুণ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের অধীনে এই ‘ডামি’ নির্বাচনের প্রতি নাগরিকদের কোনো আস্থা নেই। এই নির্বাচন বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থাকে আরও দীর্ঘায়িত করবে। তাই আমি এই নির্বাচন বাতিল করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছি। একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ক্ষমতা হস্তান্তরের সাংবিধানিক প্রক্রিয়াও চালু করতে হবে।
বাংলাদেশে একটা মানবাধিকার বিপর্যয় চলছে বলে উল্লেখ করে আকাশ বিশ্বাস বলেছেন, এসব ঘটনার বিচার করতে হবে, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দিতে হবে এবং নাগরিকদের মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক পরিসর সংকোচন করা হচ্ছে। শিক্ষার্থী ও তরুণদের বিরাজনীতিকরণ করা হয়েছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে৷ রাজনৈতিক পরিসর সংকোচনের চক্রান্ত বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হিস্যা ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনুরোধ করে আকাশ ৭ জানুয়ারির `প্রহসনের নির্বাচনের' বিরুদ্ধে সবাইকে গণ–অবস্থানের আহ্বানও জানিয়েছেন।