কালাজ্বর নির্মূলে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেল বাংলাদেশ

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে কালাজ্বর নির্মূলে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের হাতে এই স্বীকৃতির সনদ তুলে দেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পুনম ক্ষেত্রপাল
ছবি: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সৌজন্যে

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে কালাজ্বর নির্মূলে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। আজ মঙ্গলবার বিকেলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ দুপুরে ভারতের দিল্লিতে ডব্লিউএইচওর চার দিনব্যাপী চলা ৭৬তম দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের হাতে এই স্বীকৃতির সনদ তুলে দেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পুনম ক্ষেত্রপাল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সনদ পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় জাহিদ মালেক বলেন, ‘এর আগে বাংলাদেশ ফাইলেরিয়া ও পোলিও নির্মূল করে সনদ পেয়েছিল। এবার  কালাজ্বর নির্মূলে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম হওয়ায় এটি একটি জাতিগত প্রশংসিত অর্জন। এ অর্জনে দেশের স্বাস্থ্য খাতসহ আমরা সবাই গর্বিত।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই অর্জনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ পরামর্শ ও নির্দেশনার কথা উল্লেখ করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালকের প্রতিও বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

আজ সকালে এ অধিবেশনে অংশ নিয়ে দেশের প্রাইমারি স্বাস্থ্যসেবায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক এখন ভরসার জায়গা হতে পেরেছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষের জন্য শেখ হাসিনার বিশেষ অবদান দেশের ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিটি থেকে ওই এলাকার প্রায় ছয় হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছে। ধীরে ধীরে দেশের দুর্গম এলাকাতেও প্রস্তুত করা হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক।

মন্ত্রী বলেন, ক্লিনিকগুলো থেকে ৩০ রকমের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে বিনা মূল্যে। এর পাশাপাশি গ্রামের মায়েদের নিরাপদ সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রেও কমিউনিটি ক্লিনিক কাজে লাগছে। এর সুফল হিসেবে গত কয়েক বছরের জরিপে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ৩২০ থেকে কমে এখন ১৬৩ জন হয়েছে। একইভাবে প্রতি হাজার জীবিত শিশুমৃত্যুর হার ৬৫ থেকে হ্রাস পেয়ে ২৮ জনে নেমে এসেছে।

কালাজ্বর নির্মূলে বাংলাদেশকে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া প্রশংসাপত্র।

সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে সম্প্রতি জাতিসংঘ কর্তৃক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কমিউনিটি ক্লিনিক ধারণাকে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মন্ত্রী বাংলাদেশের মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস করা, গড় আয়ু বৃদ্ধি, টিকাদানে বাংলাদেশের ৯৮ ভাগ সফলতা, করোনাকালীন দুর্যোগে ১৫ হাজার চিকিৎসক, ২৫ হাজার নার্সসহ প্রায় দেড় লাখ মানুষের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান।

এই সম্মেলনে বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, পূর্ব-তিমুর, উত্তর কোরিয়াসহ ১১টি দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ দলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবীর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শাহাদত খন্দকার, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিনসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কালাজ্বর সাধারণত স্ত্রী বেলে মাছির কামড়ে ছড়ায়। বেলে মাছি ঘর এবং ঘরের আশপাশের ফাটলে বিশেষ করে স্যাঁতসেঁতে জায়গায় থাকে।  সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত সময়ে এ মাছি বেশি কামড়ায়। এর জীবাণু শরীরে প্রবেশের পর তা রক্তের লোহিত কণিকাকে আক্রান্ত করে এবং সেখানে বংশবৃদ্ধি শুরু করে। ফলে লোহিত রক্তকণিকা ভেঙে যায় এবং রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।

মুশতাক হোসেন বলেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করে দীর্ঘদিনের চেষ্টায় কালাজ্বর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। একই পন্থা অনুসরণ করে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।