মাঝেমধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কি আমাদের লোক’: আইজিপি

প্রথম আলো ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দিচ্ছেন আইজিপি বাহারুল আলম। আজ শনিবার রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক হয়ছবি: প্রথম আলো

পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক ও কার্যনির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়ার দাবি তুলেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।

গত এক বছর পুলিশপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বাহারুল আলম বলেন, ‘গত নভেম্বর থেকে আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়টা মোটেই সুখকর নয়। আমাকে প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যেই শুরু করতে হয়েছে এবং আমাকেও মাঝেমধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কি আমাদের লোক?’ ধারাবাহিকভাবে এমন কথা শুনতে হয় বলে জানান তিনি।

আজ শনিবার রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন বাহারুল আলম। যৌথভাবে এই গোলটেবিলের আয়োজন করে প্রথম আলো ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি। বৈঠকের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান।

বৈঠকের শুরুতে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ নিয়ে একটি প্রবন্ধ তুলে ধরেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অবসরপ্রাপ্ত) ও বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি ইয়াসমিন গফুর।

রাজনৈতিক সরকারই দেশ চালাবে এবং তারাই অভিভাবক উল্লেখ করে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, ‘উনারাই (রাজনৈতিক সরকার) তো আমাদের অভিভাবক, আমি মনে করি; সে জায়গাটায় কেন আমি যেতে পারছি না এবং সে ভয় থেকেই আমরা (পুলিশ) বলি, আমাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, কার্যনির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত করে একটা ইনডিপেনডেন্ট বডির আন্ডারে (স্বাধীন বিভাগের অধীন) আমাকে নিয়ে যান, ওই ভয় থেকেই; ওই আস্থাটা কেন আমি পাচ্ছি না যে ওনারাই করবেন। ওনারা দেশ চালাবেন, কিন্তু ওনারা কোনো প্রভাব বিস্তার করবেন না, সে জায়গাটায় কবে যাব আমি?’

আরও পড়ুন
প্রথম আলো-অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা। আজ শনিবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়
ছবি: প্রথম আলো

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আইজিপি বলেন, মানুষের মধ্যে কতটুকু ঘৃণা আর ক্রোধ সঞ্চারিত হলে পুলিশ থানা ছেড়ে পালায়। এমনটা ১৫০ বছরে হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের সময়ও পুলিশকে পালাতে হয়নি উল্লেখ করে পুলিশপ্রধান বলেন, ‘এত বড় একটা যুদ্ধ, তার মধ্যেও তো আমাদের পালাতে হয়নি। এর মধ্যে কেন জুলাই-আগস্টে আমাদের পালাতে হলো, কী পরিমাণ ঘৃণার সঞ্চার হয়েছিল মানুষের মধ্যে যে আমরা কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছি গত ১৫ বছর; এই জায়গায় আমার মনে হয় আত্মানুসন্ধান করি।’ তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলগুলো পুলিশকে এ থেকে বের করে নিয়ে আসবে।

আরও পড়ুন

পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বাহারুল আলম বলেন, ‘মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে, গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে এই জায়গায় যেন আমার কাছে কোনো নির্দেশনা না আসে।’ বিধান অনুযায়ী পুলিশ বাহিনীকে পরিচালনার স্বাধীনতা দেওয়ার দাবিও জানান তিনি। এ ছাড়া পুলিশের ওপর সরকারের কর্তৃত্ব কমানোর দাবিও জানান তিনি।

গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী, মানবাধিকারকর্মী নূর খান।

এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি কাজী মো. ফজলুল করীম এই বৈঠকে অংশ নেন।

আরও পড়ুন