ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সভুক্ত ব্যক্তিরা দুর্নীতিমুক্ত হলে বাংলাদেশ দুর্নীতিমুক্ত হতে বাধ্য

হাইকোর্ট ভবন
ফাইল ছবি

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের (রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদক্রম) আওতাভুক্ত ব্যক্তিরা যদি দুর্নীতিমুক্ত হন, তাহলে কোনো ব্যক্তির পক্ষে দুর্নীতি করা সম্ভব নয় বলে এক রায়ে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট।

রায়ে বলা হয়েছে, সুতরাং, বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের আওতাভুক্ত ব্যক্তিদের দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের আওতাভুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি দুর্নীতিমুক্ত হলে বাংলাদেশ সম্পূর্ণরূপে দুর্নীতিমুক্ত হতে বাধ্য।

‘মো. কামরুজ্জামান সরকার বনাম রাষ্ট্র ও অন্য’ শীর্ষক পৃথক ফৌজদারি আপিলের ওপর দেওয়া রায়ে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন অভিমত দিয়েছেন। ৭৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি আজ বুধবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় তিতাস গ্যাসের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান সরকার ও টেকনিশিয়ান আবদুর রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করে ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর জেল-জরিমানার রায় দেন বিচারিক আদালত। রায়ে উভয়কে ৫ বছর করে কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। তাঁরা বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে একই বছর হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন। পৃথক আপিল মঞ্জুর করে তাঁদের দণ্ডাদেশ বাতিল করে ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন।

জাতীয় সংসদের প্রতি হাইকোর্টের পরামর্শ

হাইকোর্ট পূর্ণাঙ্গ রায়ে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের জন্য একটা স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস গঠন করাসহ জাতীয় সংসদকে ১৬টি পরামর্শ দিয়েছেন।

রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, জাতীয় সংসদ পরামর্শগুলো গুরুত্বসহকারে আমলে নিয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বাংলাদেশ আগামী ১০ বছরের মধ্যে দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।

পরামর্শে হাইকোর্ট বলেছেন, যে প্রক্রিয়ায়, যে প্রতিষ্ঠানের (বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন) মাধ্যমে অধস্তন আদালতে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়, একই প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দুদকের কর্মকর্তা নিয়োগ করা। দুদকের অন্যান্য কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রেও পৃথক, স্বতন্ত্র ও স্বাধীন নিয়োগ বোর্ড গঠন করা। দুদকে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ পাওয়ার পর যোগদানের সময় সম্পদের বিবরণ দাখিল করা। প্রতিবছর বাধ্যতামূলকভাবে সম্পত্তির হিসাব জনসমক্ষে বা কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা।

অপর এক পরামর্শে বলা হয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের মধ্য থেকে দুদকের চেয়ারম্যান, হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের মধ্যে থেকে দুদকের সদস্য নির্বাচন করা।

রায়ে আরেক পরামর্শে বলা হয়, সৎ, দক্ষ, অভিজ্ঞ আইনজীবীদের সমন্বয়ে উচ্চ আদালত ও অধস্তন আদালতের জন্য দুদকের পৃথক প্রসিকিউশন প্যানেল গঠন করা। প্রতি তিন বছর পরপর প্যানেল পুনর্গঠন করা। প্রসিকিউশন প্যানেলে আইনজীবী মনোনয়নের জন্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বোর্ড গঠন করা। প্রসিকিউশন প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত আইনজীবীদের জন্য যুগোপযোগী সম্মানীসহ অন্যান্য সহায়তার ব্যবস্থা করা।

পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি আইন কমিশনের চেয়ারম্যানকে ই-মেইলে পাঠানোর জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেলকে (সুপ্রিম কোর্টের) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি অবগতি, পর্যালোচনার জন্য এই রায় ও আদেশের অনুলিপি জাতীয় সংসদের সব সংসদ সদস্যকে ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠাতে রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া অবগতি-পর্যালোচনার জন্য এই রায় ও আদেশের অনুলিপি অধস্তন আদালতের সব বিচারককে ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠাতেও রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ রয়েছে।