ইঞ্জিনসংকটে যখন–তখন বন্ধ যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের পথে চলাচলকারী আন্তনগর চট্টলা এক্সপ্রেস কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার নির্ধারিত সময় বেলা সোয়া দুইটায়। কিন্তু গত ১৬ আগস্ট ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পর ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। বিকল্প ইঞ্জিন কমলাপুর স্টেশনে ছিল না। এর মধ্যে কমলাপুর থেকে কনটেইনারবাহী একটি ট্রেন চট্টগ্রামের পথে যাচ্ছিল। নরসিংদী যাওয়ার পর মালবাহী ট্রেনটি থামিয়ে সেটির ইঞ্জিন ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে চট্টলা এক্সপ্রেস চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, চট্টলা এক্সপ্রেস পৌনে চার ঘণ্টা বিলম্বে যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রামে যায়। ইঞ্জিনের অভাবে প্রতিদিনই একাধিক যাত্রী ও মালবাহী ট্রেনের চলাচল বাতিল করতে হচ্ছে। গত জুন মাসে শুধু রেলের পূর্বাঞ্চলে লোকাল, মেইল, কমিউটার ও মালবাহী মিলে ৪৩৫টি ট্রেনের চলাচল বাতিল করা হয়েছে। এক হাজারের বেশি কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনালে পড়ে আছে। ইঞ্জিনের অভাবে এসব কনটেইনার পরিবহন করা যাচ্ছে না।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, এভাবে চলতে থাকলে আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে আন্তনগর ট্রেনের যাত্রাও বাতিল করতে হবে। এতে যাত্রী আয় কমবে, বাড়বে ভোগান্তি।
এই সংকটের কারণে শুধু রেলের পূর্বাঞ্চলে মালামাল পরিবহন বাবদ এক বছরে আয় কমেছে ৫৫ কোটি টাকা। রেলওয়ে সূত্র বলছে, এভাবে চলতে থাকলে আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে আন্তনগর ট্রেনের যাত্রাও বাতিল করতে হবে। এতে যাত্রী আয় কমবে, বাড়বে ভোগান্তি।
রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন ইঞ্জিন কিনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন। কারণ, এ মুহূর্তে ইঞ্জিন কেনার নতুন কোনো প্রকল্প নেই। চট্টগ্রাম-দোহাজারী নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে ৩০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন কেনার কথা রয়েছে। তবে এ প্রকল্পটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। গত এক বছরে যন্ত্রাংশ ক্রয়ের দরপত্র সময়মতো সম্পন্ন করা হয়নি। ফলে পুরোনো ইঞ্জিনের মেরামতও ঠিকঠাক হচ্ছে না।
দু-তিন মাস পর পর রেলের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে মাসিক পরিচালন পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতে অংশ নেন। বৈঠকে সময় মেনে রেল চলাচল নিশ্চিত করা, রেলের আয় বৃদ্ধি, ইঞ্জিন ও কোচের প্রাপ্যতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রেলে বর্তমানে মিটারগেজ ইঞ্জিনের সংকট সবচেয়ে বেশি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটে মিটারগেজ ট্রেন চলাচল করে। এর বাইরে মিটারগেজ ট্রেন চলে উত্তরবঙ্গের বগুড়া, নাটোর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, পঞ্চগড়সহ আরও কিছু জেলায়। খুলনা ও রাজশাহী অঞ্চলে চলে ব্রডগেজ ট্রেন।
রেলের মাসিক পরিচালন সভায় আলোচনা হয়, কেন্দ্রীয় ইঞ্জিন কারখানা থেকে মেরামত করার পর অল্প দিনের মধ্যেই কিছু ইঞ্জিন আবার বিকল হয়ে যায়। রেলের মেকানিক্যাল বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, মেরামতের পর ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে ঠিকঠাক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। অথবা যে খরচ করা হয়েছে, তা অপচয় হয়েছে। তিন-চার বছরের মধ্যে কেনা ইঞ্জিনও বিকল হয়ে পড়ছে বলে জানান তিনি।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, রেলে ইঞ্জিনের সংকট প্রকট। এ মুহূর্তে কেনার উদ্যোগ নিলেও ইঞ্জিন আসতে দুই বছর লাগবে। তাই পুরোনো ইঞ্জিন মেরামতে জোর দেওয়া হয়েছে। তবে রেলের কর্মী ও কারখানার সক্ষমতায়ও ঘাটতি আছে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটে মিটারগেজ ট্রেন চলাচল করে। এর বাইরে মিটারগেজ ট্রেন চলে উত্তরবঙ্গের বগুড়া, নাটোর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, পঞ্চগড়সহ আরও কিছু জেলায়। খুলনা ও রাজশাহী অঞ্চলে চলে ব্রডগেজ ট্রেন।
মালামাল পরিবহন ও লোকাল ট্রেন বিলুপ্তির পথে
গত ২৮ জুলাই রেলের পূর্বাঞ্চলের সহকারী প্রধান পরিচালন সুপারিনটেনডেন্ট কামাল আখতার হোসেন মেকানিক্যাল বিভাগকে একটা চাহিদাপত্র পাঠান। এতে তিনি বলেন, পরিবহনের জন্য চট্টগ্রামে ১ হাজার ২৮৬টি কনটেইনার পড়ে আছে। কিন্তু ইঞ্জিনের অভাবে এসব কনটেইনার ট্রেন চালানো যাচ্ছে না। চিঠিতে বলা হয়, রেলের পূর্বাঞ্চলে মাল পরিবহনের জন্য বর্তমানে দুটি ইঞ্জিন রয়েছে। একটি দিয়ে কনটেইনার ও অন্যটি দিয়ে জ্বালানিবাহী ট্যাংকার পরিবহন করা হচ্ছে। জমে থাকা মালামাল পরিবহন করতে হলে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১৩টি মালবাহী ট্রেন চালানো দরকার।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে ৮৭৫টি কনটেইনার রাখার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু রেল চাহিদামতো পরিবহন করতে না পারায় ১ হাজারের বেশি কনটেইনার জমে গেছে। ট্রেন চালানো যাচ্ছে মাত্র একটি। ফলে রপ্তানিকারকেরা বিপাকে পড়েছেন।
রেলের সবচেয়ে বেশি মালামাল পরিবহন করা হয় পূর্বাঞ্চলে। মালামাল পরিবহনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মালামাল পরিবহন করে রেল আয় করে প্রায় ১৫৩ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই খাতে আয় কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে ১০ লাখ মেট্রিক টনের মতো মালামাল পরিবহন করা হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে মালামাল পরিবহন করা হয় প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন।
চট্টগ্রাম বন্দরে ৮৭৫টি কনটেইনার রাখার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু রেল চাহিদামতো পরিবহন করতে না পারায় ১ হাজারের বেশি কনটেইনার জমে গেছে। ট্রেন চালানো যাচ্ছে মাত্র একটি। ফলে রপ্তানিকারকেরা বিপাকে পড়েছেন।বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম
রেল সূত্র বলছে, ইঞ্জিনের সংকট হলে তারা লোকাল, মেইল, কমিউটার এবং মালবাহী ট্রেন বাতিল করে দেয়। আন্তনগর ট্রেনগুলো বাতিল করলে যাত্রীরা হই চই করেন। গত জুনে ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে ২৮০টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়। চট্টগ্রাম অঞ্চলে বাতিল করা হয় ১০৭টি ট্রেন। উত্তরের পথে চলাচলকারী ট্রেন বাতিল হয় ৪৮টি।
রেলের হিসাবে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পূর্বাঞ্চলে ৯১ শতাংশ আন্তনগর ট্রেন সময় মেনে চলাচল করেছে। এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮৯ শতাংশ। পশ্চিমাঞ্চলে গত অর্থবছরে প্রায় ৯০ শতাংশ আন্তনগর ট্রেন সময় মেনে চলেছে। এর আগের বছর ছিল ৮৮ শতাংশ। অর্থাৎ পশ্চিমাঞ্চলের ব্রডগেজ ট্রেনে সময় মেনে চলার হার বেড়েছে।
কিছুদিন আগে চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রামে যাচ্ছিল সাগরিকা কমিউটার ট্রেন। কিছু দূর যাওয়ার পর ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। পাশের জংশন লাকসামেও কোনো বিকল্প ইঞ্জিন ছিল না। চট্টগ্রাম থেকে ইঞ্জিন আসে রাত নয়টায়। এরপর ট্রেনটি চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এ সময় যাত্রীরা ট্রেনের কর্মীদের মারতে উদ্যত হন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।
নতুন ইঞ্জিনও বিকল হচ্ছে
রেলের হিসাবে, ২০২৪ সালের জুন থেকে গত জুন পর্যন্ত পাহাড়তলী কেন্দ্রীয় লোকোমেটিভ কারখানা থেকে ৪৬টি ইঞ্জিন মেরামত করে রেললাইনে নামানো হয়। এর মধ্যে গত মাসে ২৯২২ নম্বর ইঞ্জিনটি বিকল হয়ে যায়। এটি জামালপুর থেকে চট্টগ্রামগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন নিয়ে যাচ্ছিল। ২৩১৫ নম্বরের ইঞ্জিনটি এক বছরে দুবার মেরামত কারখানায় নিতে হয়। একবার পথে ইঞ্জিন বিকল হলে আরেকটি ইঞ্জিন আশপাশের জংশন থেকে চালিয়ে আনতে হয়। এর মধ্যে তিন-চার ঘণ্টা চলে যায়।
কিছুদিন আগে চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রামে যাচ্ছিল সাগরিকা কমিউটার ট্রেন। কিছু দূর যাওয়ার পর ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। পাশের জংশন লাকসামেও কোনো বিকল্প ইঞ্জিন ছিল না। চট্টগ্রাম থেকে ইঞ্জিন আসে রাত নয়টায়। এরপর ট্রেনটি চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এ সময় যাত্রীরা ট্রেনের কর্মীদের মারতে উদ্যত হন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, ২০১২ সালের দিকে তিন শতাধিক যাত্রীবাহী ট্রেন চলত, এখন চলছে ২২৮টি। চালু ট্রেনগুলোর বেশ কটি অবশ্য ইঞ্জিন বিকল হলে বন্ধ থাকে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় রেলবহরে ইঞ্জিন ছিল ৪৮৬টি। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩০৬টিতে। এগুলোর ৬০ শতাংশ মেয়াদোত্তীর্ণ, অর্থাৎ ২০ বছরের আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। বর্তমানে থাকা ৩০৬টি ইঞ্জিনের মধ্যে ১১টি দীর্ঘদিন ধরেই বিকল। সেগুলো আর মেরামত সম্ভব নয় বলে সূত্র জানিয়েছে। বাকি ২৯৫টি ইঞ্জিনের মধ্যে ২৮-৩০ শতাংশ পালাক্রমে মেরামতে থাকে। কার্যত নিয়মিত ব্যবহারের জন্য পাওয়া যায় ২০০টির মতো ইঞ্জিন। চলতি অর্থবছরে মেরামতের জন্য ১২টি ইঞ্জিনের জন্য ৯৬ ধরনের খুচরা যন্ত্রাংশ দরকার; যা এ মুহূর্তে রেলের হাতে নেই।
আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে রেলের উন্নয়নে এক লাখ কোটি টাকার মতো খরচ করা হয়েছে। এর বড় অংশই খরচ হয়েছে নতুন নতুন রেললাইন নির্মাণে। এ সময় ৭০টি নতুন ইঞ্জিন কেনা হয়েছে। আর ৩০টি পুরোনো ইঞ্জিন অনুদান হিসেবে দিয়েছে ভারত। ফলে রেলপথ বাড়লেও চলাচলকারী ট্রেনের সংখ্যা কমেছে।
আয়ে টান পড়েছে
২০২৪-২৫ অর্থবছরে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন বাবদ ১ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল রেলওয়ে। কিন্তু গত অর্থবছরে আয় হয়েছে ১ হাজার ৭৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা কম আয় করেছে সংস্থাটি। এর বাইরে রেলওয়ে জমি ইজারাসহ অন্যান্য খাতে আয় করে। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে আয় হয়েছে ১ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেলওয়ে সব মিলিয়ে আয় করেছিল ১ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় আয় কমেছে ৭৯ কোটি টাকা।
রেল কর্মকর্তারা বলছেন, ১ টাকা আয় করতে আড়াই টাকা ব্যয় করে আসছিল রেলওয়ে। গত অর্থবছরে ১ টাকা আয়ের বিপরীতে খরচ কমিয়ে ২ টাকা ৯ পয়সা করা হয়। রেলওয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মূলত ব্যয়ে রাশ টানা হয়েছে। কিছু কিছু অপচয়ও রোধ করা গেছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আয় বাড়ানো গেলে আরও ভালো হতো। অর্থাৎ ব্যয় কমানো গেছে। কিন্তু রেলের আয় বাড়েনি।
রেলওয়ের লোকসান বাড়ছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সময় রেলের বার্ষিক লোকসান ছিল ৬৯১ কোটি টাকা। এরপরই নতুন রেললাইন নির্মাণসহ নানা প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগ শুরু করে সরকার। বাড়ানো হয় ভাড়া। এরপরও তাতে বাড়তে থাকে লোকসান। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেলের আয় ছিল ১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। লোকসান ১ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা।
অনেক লোকাল ট্রেন ছিল, যেগুলো ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় কৃষকের পণ্য নিয়ে আসত। এগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। মন্ত্রী ও রাজনীতিকদের ইচ্ছায় তাঁদের এলাকায় নতুন নতুন আন্তনগর ট্রেন চালু করা হয়েছে। এর আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ করা উচিত।পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক সামছুল হক
ইঞ্জিনের সংকটে লোকাল ও মালবাহী ট্রেন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক সামছুল হক। তিনি বলেন, ট্রেনে যাত্রী উঠলে ভাড়া পাওয়া যাবে কি যাবে না—এটা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। যাত্রী ওঠা-নামার জন্য স্টেশনে স্টেশনে প্রচুর জনবল রাখতে হয়। কিন্তু মালবাহী ট্রেনে একবার কনটেইনার তুলে দিতে পারলে ভাড়া নিশ্চিত। এ জন্য সারা বিশ্বে রেলে মাল পরিবহনে জোর দেওয়া হয়। এই আয় থেকে যাত্রীদের ভর্তুকি দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ে ঠিক উল্টোটা করছে।
সামছুল হক আরও বলেন, অনেক লোকাল ট্রেন ছিল, যেগুলো ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় কৃষকের পণ্য নিয়ে আসত। এগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। মন্ত্রী ও রাজনীতিকদের ইচ্ছায় তাঁদের এলাকায় নতুন নতুন আন্তনগর ট্রেন চালু করা হয়েছে। এর আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ করা উচিত। নতুন নতুন ইঞ্জিন কেন দ্রুত বিকল হয়ে যাচ্ছে, সেটাও তদন্ত করে দেখতে হবে। রেল এখন যে পথে হাঁটছে তা আত্মঘাতী। যে বিপুল বিনিয়োগ করা হয়েছে তা পুরো বিফলে চলে যাবে।