‘ঈদের সময় এভাবে বাড়ি আসতে হবে, কল্পনাও করিনি’

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সাতঘড়িয়ার গ্রামের বাড়িতে গতকাল বুধবার দাফন করা হয়েছে দন্তচিকিৎসক কুরবান আলীকে। চটগ্রাম শহরে ‘কিশোর গ্যাংয়ের’ সদস্যদের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনিছবি: সংগৃহীত

‘ঘরের আলো নিভে গেলে ঈদের আনন্দ থাকে কী করে? বটবৃক্ষকে হারিয়ে এতিম হয়ে গেলাম আমরা। এতিমদের যে রকম ঈদ কাটে, আমাদেরও তেমন ঈদ হচ্ছে এবার,’ কথাগুলো বললেন চট্টগ্রামে ‘কিশোর গ্যাং’-এর সদস্যদের হামলায় প্রাণ হারানো দন্তচিকিৎসক কুরবান আলীর ছেলে আলী রেজা। হামলার শিকার হওয়ার পর কয়েক দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে গতকাল বুধবার মারা যান কুরবান আলী। গতকালই তাঁকে সন্দ্বীপের সাতঘড়িয়ায় গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়।

বাবাকে দাফনের জন্য দীর্ঘদিন পর গতকাল গ্রামের বাড়িতে যান আলী রেজা। তিনি আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, প্রতিবছর অন্য সবার মতো ঈদের সময় আনন্দ-উচ্ছ্বাসে দিন পার করতেন তাঁরা। কিন্তু এবার তার ছিটেফোঁটাও নেই।

এবার ঈদের আগের দিনগুলো হাসপাতালে কেটেছে আলী রেজাদের। তিনি বলেন, ক্ষীণ হলেও আশা ছিল, বাবা ফিরে আসবেন। কিন্তু ঈদের আগের দিন তিনি চলে গেলেন।

ঈদ অন্যদের জন্য আনন্দের বার্তা নিয়ে এলেও আলী রেজা ও তাঁর পরিবারের জন্য নিয়ে এসেছে শোক। ঈদের আগের দিন বাবার লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেষ কবে বাড়ি এসেছিলেন, তা মনে পড়ছে না। কিন্তু এবার যে এভাবে আসতে হবে, তা কল্পনাতেও ছিল না। আর যেন কারও এমন পরিস্থিতি না আসে।

ছেলে আলী রেজাকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়েই হামলার শিকার হয়েছিলেন কুরবান আলী। গত শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ থানার পশ্চিম ফিরোজ শাহ হাউজিং এলাকার জে লাইন দিয়ে যাচ্ছিলেন আলী রেজা। তখন দুজন স্কুলছাত্র তাঁর সাহায্য চায়। তাদের কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মারধর করছিল। তখন আলী রেজা ৯৯৯-এ ফোন করেন। পুলিশ এসে হামলাকারী একজনকে ধরে নিয়ে যায়। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় ইফতারি কিনতে বের হন আলী রেজা। তখন তাঁকে পেয়ে মারধর করতে থাকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে আসেন তাঁর বাবা কুরবান আলী। একপর্যায়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের ইটের আঘাতে মাথায় গুরুতর আঘাত পান তিনি। প্রথমে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ এলাকায় ‘কিশোর গ্যাংয়ের’ সদস্যদের হামলায় নিহত দন্তচিকিৎসক কুরবান আলীর জানাজা হয়
ছবি: সংগৃহীত

পরিবারের পরিস্থিতি জানাতে গিয়ে আলী রেজা বললেন, তাঁর বাবা-চাচারা চার ভাই। কুরবান আলী ছিলেন সেজ। কিন্তু বয়সে ছোট হলেও চাচাদের বড় ভরসার জায়গা ছিলেন তাঁর বাবা। শুধু তা-ই নয়, চাচাতো ভাই-বোনদেরও অভিভাবক ছিলেন তিনি। এককথায়, তাঁ বাবা ছিলেন পুরো পরিবারের জন্য ‘বটবৃক্ষের’ মতো। তাই বাবাকে হারিয়ে সবাই মুষড়ে পড়েছেন।

আলী রেজা বলেন, তাঁর বাবা কুরবান আলী জীবনে কারও কোনো দিন ক্ষতি করেননি। যখন যেভাবে পেরেছেন, অন্যদের সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। সব সময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সে কারণে তাঁর জানাজায় উপস্থিত হয়ে গ্রামের মানুষ বাবার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ দেখিয়েছেন।

এখন বাবার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান আলী রেজা। তবে ওই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের নিয়ে মনে ভয় কাজ করছে তাঁর। আলী রেজা বলেন, এখনো মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। খুনিরা এলাকায় প্রভাবশালী। তাদের যদি ধরা না হয়, তাহলে আবারও বিপদের শঙ্কা আছে।