নাজমুল হুদাসহ তিন সেনা কর্মকর্তা হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেল সিআইডি

শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রমসহ তিন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনায় করা মামলার তদন্ত পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সংস্থা সিআইডি) ন্যস্ত করা হয়েছে। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিআইডির গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আজাদ রহমান।

শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে মামলার তদন্তভার ঈদুল আজহার আগে সিআইডির কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে।

শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রমসহ তিন সেনা কর্মকর্তা হত্যার ৪৭ বছর পর গত ১০ মে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন নাজমুল হুদার মেয়ে সংসদ সদস্য নাহিদ ইজাহার খান।

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে গুলি চালিয়ে নাজমুল হুদাকে হত্যা করা হয়। মামলায় মেজর (অব.) আবদুল জলিলকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং জাসদ নেতা লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহেরকে (অব.) হুকুমের আসামি করা হয়।

নাহিদ ইজাহার খান মামলায় উল্লেখ করেছেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিপথগামী ও বিশৃঙ্খল সদস্যদের হাতে কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রম নিহত হন। তিনি তখনকার সেনাবাহিনীর রংপুরের ৭২ ব্রিগেড কমান্ডার ছিলেন। নাজমুল হুদার সঙ্গে অপর দুই সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার বীর উত্তমও নিহত হন।

মামলায় নাহিদ ইজাহার খান লিখেছেন, তাঁর বাবা (নাজমুল হুদা) নিহত হওয়ার সময় তিনি ও তাঁর ভাই ছোট ছিলেন। তাঁরা বড় হয়ে বাবার কোর্সমেট, সহকর্মী ও বিভিন্ন সূত্র থেকে অনুসন্ধানে জানতে পারেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সকালে দশম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট অফিসে (এখনকার জাতীয় সংসদ ভবনের এমপি হোস্টেল) শহীদ কর্নেল নাজমুল হুদার সঙ্গে অপর দুই সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার বীর উত্তমও অবস্থান করছিলেন। নাজমুল হুদা সকালে নাশতা করার সময় দশম ইস্ট বেঙ্গলের সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল নওয়াজেশের কাছে দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারি থেকে একটি ফোন আসে। এরপর দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তারা নাজমুল হুদাসহ তিন কর্মকর্তাকে বাইরে নিয়ে যান।

মামলায় লেখা হয়েছে, ১৯৭৫ সালে তখনকার সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং জাসদ নেতা লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহেরের (অব.) নির্দেশে দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তা, জেসিও ও সৈনিকেরা সংঘবদ্ধভাবে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটান। লেফটেন্যান্ট কর্নেল সিরাজ (তৎকালীন ক্যাপ্টেন), মেজর মুকতাদির (তৎকালীন ক্যাপ্টেন) ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা আরও জানতে পারেন, দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তা, জেসিও এবং সৈনিকদের সঙ্গে মেজর মো. আসাদ উজ্জামান (অব.), মেজর মো. আবদুল জলিল (অব.) সাবেক তিন সেনা কর্মকর্তা নাজমুল হুদা, খালেদ মোশাররফ ও এ টি এম হায়দারকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করেন। মৃত্যু নিশ্চিত করতে গুলি করার পর তাঁদের বেয়নেট দিয়ে আঘাত করা হয়।

নাহিদ ইজাহার খান মামলায় আরও উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তাঁর বাবা (নাজমুল হুদা) সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি ছিলেন যশোর ৮ নম্বর সেক্টরের বায়রা সাব-সেক্টর কমান্ডার। পরে দেশে তাঁদের জন্য সময়টা এতটাই প্রতিকূল ছিল যে একবার ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকার কাছে তাঁর ভাই গিয়েছিলেন বাবার নামে রাস্তার নামকরণের জন্য। তখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে রাস্তার নামকরণ করা হচ্ছিল। তিনি (সাদেক হোসেন খোকা) তাঁর ভাইয়ের আবেদনপত্র হাতে নিয়ে বাবার নাম দেখে তাঁকে অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সরকার ক্ষমতায়। দেশবাসী ন্যায়বিচার পাচ্ছে। তাই তিনি তাঁর বাবাসহ তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা সামরিক কর্মকর্তার হত্যার বিচার দাবি করেছেন।