ক্যানসারে ভেঙে পড়া নয়, আছে ওষুধ, সংগঠন

চিকিৎসকেরা বলছেন, রক্তের এই বিশেষ ধরনের ক্যানসার পরীক্ষা ও চিকিৎসার সব সুযোগ দেশে আছে। বিদেশে যাওয়ার দরকার নেই।

ভেঙে পড়েননি শাহরিয়ার হাসান। ২৫ বছর বয়সে ২০০১ সালে তাঁর বিশেষ ধরনের রক্তের ক্যানসার শনাক্ত হয়। নিয়মিত ওষুধ খেয়ে আর চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলে ভালো আছেন তিনি। অন্য ক্যানসার রোগীদের সহায়তার জন্য গড়ে তুলেছেন সংগঠন।

রোগবিশেষজ্ঞরা বলেন, ক্যানসার আছে ৩০ ধরনের বেশি। এর একটি রক্তের ক্যানসার বা লিউকোমিয়া। রক্তের ক্যানসারেরও আবার নানা উপধরন আছে। এর একটির নাম ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া। ক্যানসারের চিকিৎসকদের কাছে সিএমএল নামে পরিচিত। শাহরিয়ার হাসান সিএমএলের রোগী।

সিএমএল রক্তের এমন ক্যানসার, যা শ্বেতকণিকাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং এই ক্ষতিগ্রস্ত করার কাজটি ধীরে ধীরে হয় বহু বছর ধরে। মানুষের বংশগতির বাহক ক্রোমোজোমের ৯ ও ২২ নম্বরের বিনিময়জনিত ত্রুটির কারণে সিএমএল দেখা দেয়। বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ২২ তারিখে বিশ্ব সিএমএল সচেতনতা দিবস হিসেবে পালিত হয়।

সংগঠনের মাধ্যমে আমরা নিজেরাই নিজেদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আশা করি সচেতন মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়াবেন।
শাহরিয়ার হাসান, ক্যানসারযোদ্ধা

আজ বৃহস্পতিবার দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ সেমিনারের আয়োজন করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেমাটোলজি বিভাগ।

বাংলাদেশে কোন ক্যানসারে কত মানুষ আক্রান্ত, তার সঠিক পরিসংখ্যান কোনো দপ্তরে নেই। তবে ক্যানসার পরিস্থিতির ওপর নজরদারির বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবোকনের হিসাবে, প্রতিবছর বাংলাদেশে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৭৫ জন নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত হয় ২ হাজার ৮১২ জন এবং মারা যায় ২ হাজার ১৩২ জন।

বৈশ্বিক এ হিসাবে সিএমএলের পৃথক কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। তবে রক্তের ক্যানসারের ৫ থেকে ১০ শতাংশ সিএমএলের। এর প্রকোপ নারীর চেয়ে পুরুষের মধ্যে কিছুটা বেশি দেখা যায়।

বিএসএমএমইউয়ের হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. সালাহউদ্দীন শাহ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে সিএমএলের চিকিৎসার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে। রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন। ওষুধও দেশে পাওয়া যায়। সিএমএলের চিকিৎসায় কোনো মানুষের দেশের বাইরে যাওয়ার দরকার নেই।

এ রোগের ব্যাপারে মানুষের সচেতন হওয়া ও সতর্ক থাকা জরুরি বলে মনে করেন অধ্যাপক মো. সালাহউদ্দীন শাহ। অবসাদগ্রস্ততা, ক্ষুধামান্দ্য, ওজন কমে যাওয়া, রাতে ঘেমে যাওয়া, প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া—এসব সিএমএলের উপসর্গ। এসব উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

এসব উপসর্গ নিয়ে তরুণ বয়সে; অর্থাৎ মাত্র ২৫ বছর বয়সে এ রোগ শনাক্ত হয় শাহরিয়ার হাসানের শরীরে। তখন তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। সেই চাকরি ছেড়ে এখন ব্যবসা করছেন।

এই ক্যানসারযোদ্ধা প্রথম আলোকে বলেন, রোগ যেহেতু একেবারে নিরাময় হয় না, তাই সারা জীবন এর ওষুধ নিয়মিত খেয়ে যেতে হয়। দেশে এ রোগের চিকিৎসায় ওষুধ আছে ঠিকই, কিন্তু দরিদ্র রোগীর পক্ষে এ ওষুধ নিয়মিত কেনা ও খাওয়া সম্ভব নয়।

এসব দরিদ্র রোগীর কথা চিন্তায় নিয়ে শাহরিয়ার হাসানের মতো ক্যানসারযোদ্ধারা নিজেরাই একটি সংগঠন তৈরি করেছেন। বাংলাদেশ সিএমএল সাপোর্ট গ্রুপ নামের সংগঠনটি মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি দরিদ্র রোগীদের ওষুধ ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করে।

বর্তমানে এর সদস্যসংখ্যা ১০০। শাহরিয়ার হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংগঠনের মাধ্যমে আমরা নিজেরাই নিজেদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আশা করি সচেতন মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়াবেন।’