ভোটের গাড়ির প্রচারণা শুরু
নির্ভীক মতপ্রকাশের পরিবেশ নিশ্চিতে সরকার বদ্ধপরিকর: প্রধান উপদেষ্টা
জনগণের মুক্ত ও নির্ভীক মতপ্রকাশের পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই, যেখানে থাকবে ভয় থাকবে না, বাধা থাকবে না। থাকবে কেবল জনগণের মুক্ত ও নির্ভীক মতপ্রকাশ। সরকার সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।’
সোমবার বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ‘ভোটের গাড়ি’র প্রচারণা শুরুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে ভোটারদের সচেতন ও উৎসাহিত করতে ‘ভোটের গাড়ি’র প্রচারণা শুরু হয়েছে। ভোটারদের উৎসাহিত করতে এ ভোটের গাড়ি দেশের ৬৪ জেলা ও তিন শতাধিক উপজেলা প্রদক্ষিণ করবে।
ভিডিও বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিক্রম করছে। সামনে আমাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ওপর গণভোট। এ দুটো সামনে রেখে যাত্রা শুরু করছে ১০টি ভোটের গাড়ি “সুপার ক্যারাভান”। এসব গাড়ি দেশের ৬৪টি জেলা এবং তিন শ উপজেলা ঘুরে বেড়াবে।’
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তারা (ভোটের গাড়ি) মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে নির্বাচন এবং গণভোট সম্পর্কে তথ্য পৌঁছাবে, ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করবে এবং গণতন্ত্রের বার্তা ছড়িয়ে দেবে।
দেশের সব নাগরিকের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রিয় নাগরিকবৃন্দ, ভোটাধিকার কারও দয়া নয়। এটি আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমেই আমরা ঠিক করি ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, এটি রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই সুপার ক্যারাভান কেবল একটি গাড়িই নয়, এটি গণতন্ত্রের আনন্দবাণী বহনকারী ভোট। এটি জানিয়ে দেবে আপনার একটি ভোট কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এটা মনে করিয়ে দেবে নিষ্ক্রিয়তা নয়, অংশগ্রহণই গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে। আমি বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি তরুণসমাজ, নারী ভোটার ও ভোটারদের। আপনারা এগিয়ে আসুন, জানুন, বুঝুন এবং প্রশ্ন করুন। আপনার সিদ্ধান্তে গড়ে উঠবে আগামী দিনের বাংলাদেশ, নতুন বাংলাদেশ।’
অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত থেকে ফিতা কেটে ভোটের গাড়ির উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
ভোটের গাড়িতে বড় একটি ডিজিটাল পর্দা রয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে ‘গণভোট ২০২৬ সংসদ নির্বাচন, দেশের চাবি আপনার হাতে’।
জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের ব্যালট যাতে ভোটাররা সহজে চিনতে পারে, তাই ভোটের গাড়ি সুপার ক্যারাভান ভোটারের কাছে গণভোটের ব্যালটের কালার ও তা কিসের ভিত্তিতে হচ্ছে, ‘হ্যাঁ’ ভোট কী এবং ‘না’ ভোট কী, গণভোটে কয়টি প্রশ্ন রয়েছে, সেগুলো কী কী, সেসব বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরবে। পাশাপাশি ভোটারদেরকে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটকেন্দ্রে আসতে উৎসাহিত করবে এই ভোটের গাড়ি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন তথ্য উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান ও সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
তথ্য উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য সাধারণত যে ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকে, তা মোকাবিলায় সরকার পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে যে আরও কিছু বাড়তি চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে চলে এসেছে। সেগুলো মোকাবিলা করার জন্য আমাদের আরও বেশি প্রস্তুতি নিতে হবে।’
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, এই নির্বাচনটা স্রেফ আরেকটা নির্বাচন না। এটার একটা বিশেষ ভূমিকা আছে। তিন টার্ম বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। তারপর ’২৪–এ একটা বড় গণ–অভ্যুত্থান হয়েছে এবং গণ–অভ্যুত্থানের পরের সরকার হচ্ছি আমরা। মানুষ এই ভোটের মধ্য দিয়ে..দেশের মালিকানা বুঝে নেবে। এ দেশের মালিকানা বাংলাদেশের মানুষের হাতে ছিল না। এটা আপনারা সবাই জানেন।’
গণভোট প্রসঙ্গে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘গণভোট আমাদের কাছে আমরা মনে করি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হয়তোবা সংসদ নির্বাচনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই অর্থে যে এটা আমাদের ভবিষ্যতের বাংলাদেশের পথরেখা নির্ধারণ করবে। এই কাজটা মানে এই দুইটা নির্বাচনের মেসেজটা (বার্তা) আমরা যাতে মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারি, সেই মেসেজ পৌঁছানোর জন্য এই ভোটের গাড়ির কার্যক্রম চলছে।’