মশা নিরোধক উপকরণ ব্যবহারে যা জানা দরকার

মশা তাড়ানোর স্প্রে বা ইলেকট্রিক কয়েল ঘরে দেওয়ার পর সেখানে পরবর্তী ২০ মিনিট মানুষকে থাকতে নিষেধ করা হয়প্রতীকী ছবি

বছরে তিনবার ‘মশা জরিপ’ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা। তখনই বোঝা যায়, সামনের সময়টায় মশার সংখ্যা কেমন বাড়বে। সংখ্যা বেড়ে গেলে বেড়ে যায় মশাবাহিত রোগের পরিমাণ ও মানুষের ভোগান্তি। তাই স্বাভাবিকভাবেই মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য নানা ধরনের পণ্যের ব্যবহার বেড়ে যায়।

বাজারে মশা তাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উপকরণ পাওয়া যায়। যেমন মশার কয়েল, স্প্রে, ত্বকে লাগানোর লোশন, কীটনাশক, পাওয়ার গার্ড মেশিন, কিলার ব্যাট, ম্যাজিক মশারি, কিলিং ল্যাম্প ইত্যাদি। কিন্তু এত পণ্যের ভিড়ে কীভাবে বুঝবেন, কোন পণ্যটি কার্যকর এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়? এ ছাড়া কোন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এসব পণ্যের গুণগত মান যাচাই করা হয়?

মশা নিরোধক উপকরণ কতটা কার্যকর

মশা থেকে সুরক্ষা পেতে প্রচলিত অনুষঙ্গ ব্যবহারে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে তা মানবস্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি করবে না
প্রতীকী ছবি

মশা থেকে সুরক্ষা পেতে প্রচলিত অনুষঙ্গ ব্যবহারে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে তা মানবস্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি করবে না। এ ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. সাইফুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘মশা তাড়াতে ব্যবহৃত বেশির ভাগ অ্যারোসল স্প্রেতে পাইরিথয়েড নামের রাসায়নিক উপাদান থাকে। এটি বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে মেশে এবং মশা তাড়ায়। এমনিতে এর খুব ক্ষতিকর প্রভাব না থাকলেও একাধিক গবেষণায় দেখা যায়, ক্ষেত্রবিশেষে এ ধরনের স্প্রের ব্যবহার হাঁপানি ও ব্রঙ্কাইটিস রোগীদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর কয়েলের ধোঁয়ায় ফরমালডিহাইড, হাইড্রোকার্বনসহ আরও কিছু উপাদান থাকে, যেগুলোর নির্দিষ্ট পরিমাণের বাইরে গেলে তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তবে জ্বালানো কয়েল যেন শিশুদের হাতের নাগালের বাইরে থাকে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।’

এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনামতে, মশা তাড়ানোর স্প্রে বা ইলেকট্রিক কয়েল ঘরে দেওয়ার পর সেখানে পরবর্তী ২০ মিনিট মানুষকে থাকতে নিষেধ করা হয়। কারণ, ওই স্প্রেতে ছড়ানো কীটনাশকের ড্রপলেটস মাটিতে নেমে আসতে ২০ মিনিট সময় নেয়। ফলে তখন সেখানে মানুষ থাকলে তিনি সরাসরি কীটনাশকের সংস্পর্শে আসবেন, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

কিন্তু এটি ক্ষতিকর কি না, সাধারণ মানুষ তা কীভাবে বুঝবে? এ প্রসঙ্গে ডা. মো. সাইফুল্লাহ বলেন, ‘কোনো কয়েল বা স্প্রে ব্যবহারে যদি ব্যবহারকারীর হাঁচি-সর্দি-গলাব্যথা হয় এবং ঘরের মশার সঙ্গে টিকটিকি বা অন্য ছোট পোকার মৃত্যু ঘটে, তবে সেই কয়েল বা স্প্রে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।’ তাই উপকরণগুলো ব্যবহারে বিশেষজ্ঞ ও মান যাচাইকারী সংস্থার নির্দেশিকা মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি।

মশার কামড় থেকে রেহাই পেতে প্রচলিত অনুষঙ্গ

মশা নিরোধক উপকরণগুলোর মধ্যে স্প্রে বা ক্রিম সাধারণ শহরাঞ্চলের মানুষেরাই বেশি ব্যবহার করেন। কিন্তু সামর্থ্য বিবেচনায় প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ শহরেও মশা তাড়ানোর উপকরণ হিসেবে কয়েলই বেশ প্রচলিত। বাজারে নানা ব্র্যান্ডের কয়েল পাওয়া যায়। এসব কয়েল তৈরিতে কতটুকু গুণগত মান রক্ষা করা হয়? এ ব্যাপারে প্রথম আলো ডটকমের সঙ্গে কথা বলেন কাজী এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান কাজী নাজমুল আবেদীন। তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ ২২ বছর ধরে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যথাযথ প্রক্রিয়া মেনেই ঈগল মশার কয়েল বাজারজাত করছি। আমাদের সেবায় মানুষের সচেতনতা এবং সুরক্ষাকে সব সময় নিশ্চিত করে।’

কীভাবে এ নিশ্চয়তা দিচ্ছেন? জানতে চাইলে কাজী নাজমুল আবেদীন বলেন, ‘উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় ঈগল ব্র্যান্ড বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত মান, উপাদান ও তাদের গ্রহণযোগ্য মাত্রার নির্দেশিকা অনুসরণ করে। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নির্দেশিত গাইডলাইন অনুসরণে ঠিকমতো কাজ হচ্ছে কি না, তা যাচাই করতে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশে প্ল্যান্ট প্রটেকশন উইং (পিপিডব্লিউ) কাজ করছে। আমাদের ব্র্যান্ডের কয়েল এই সংস্থা কর্তৃক পরীক্ষিত ও স্বীকৃত। শুধু তা-ই নয়, ঈগল মশার কয়েল প্রয়োজনীয় সব ধাপে বিএসটিআই কর্তৃক অনুমোদিত এবং বুয়েট দ্বারা গুণমান ও উৎপাদনপ্রক্রিয়া স্বীকৃত।’

মশা নিরোধক উপকরণের মান যাচাইপ্রক্রিয়া

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, মশার ওষুধ বাজারজাত করার আগে প্রতিটি পণ্যের জন্য তাদের ‘প্ল্যান্ট প্রটেকশন উইং’ থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। লাইসেন্স পেতে প্রথমে রেজিস্ট্রেশন করতে হয় কোম্পানিকে। তারপর রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) থেকে ওই পণ্যের নমুনা পরীক্ষা করতে হয়। সেটিতে উত্তীর্ণ হলে সর্বশেষ মাঠপর্যায়ে দুবার ট্রায়াল চালানো হয়। সেই সময় জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিছু না পেলে সেটিকে অনুমোদন দেওয়া হয় এবং বাজারজাতকরণের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এ ছাড়া গুণগত মান মনিটরিংয়ের জন্য প্রতিটি উপজেলায় দুজন করে কীটনাশক পরিদর্শক রয়েছেন, যাঁরা নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিদর্শনে গিয়ে কোনো অনিয়ম পেলে জরিমানা করেন।