‘সামর্থ্য নেই, দ্বিতীয় দিন ১০০ গ্রাম কিনলাম’

খেজুরের দাম শোনার পর অনেকেই না কিনে বা সামান্য কিছু কিনে বাড়ি ফিরছেন। চট্টগ্রাম নগরের জমিয়াতুল ফাল্লাহ মসজিদের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

মোহাম্মদ মাহফুজ গত বছর রমজানের প্রথম দিনই ভালো মানের এক কেজি আজোয়া খেজুর কিনেছিলেন ৫০০ টাকা দিয়ে। নগরের রেয়াজউদ্দিন বাজারের গ্রিন ট্রেডার্স থেকে তিনি এই খেজুর কেনেন। আজ শনিবার যখন একই দোকানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এই ব্যক্তির সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন ঘড়ির কাঁটা বেলা দুইটার ঘরে। তিনি আজ এখান থেকে মাত্র ১০০ গ্রাম আজোয়া খেজুর কেনেন।

মাহফুজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার ভালো মানের আজোয়া খেজুরের দাম পড়ছে প্রায় এক হাজার টাকা। অথচ গতবার অর্ধেক দামেই একই মানের খেজুর কিনেছি। দাম বেড়ে যাওয়ায় এক কেজি কেনার সামর্থ্য নেই। এ কারণে প্রথম দিন খেজুর কেনা হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয় দিন মাত্র ১০০ গ্রাম কিনলাম।’

গ্রিন ট্রেডার্সের কর্ণধার মেহেদি হাসান প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার সব ধরনের খেজুরে ৫০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়তি। পাইকারি থেকে বেশি দরে কিনতে হচ্ছে। আর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে বিক্রিও অনেক কমে গেছে। এখন ক্রেতারা ১০০ গ্রাম, ২০০ গ্রাম করে খেজুর কিনছেন। দাম নাগালে থাকলে বাজারে খেজুর কেনার ধুম পড়ে যায়।

চট্টগ্রামের রেয়াজউদ্দিন বাজার, দুই নম্বর গেট ও আন্দরকিল্লা ঘুরে দেখা গেছে, আজোয়া খেজুরের দাম শুরু হয়েছে প্রতি কেজি ৭০০ টাকা থেকে। ভালো মানের আজোয়ার দাম পড়ছে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা। এ ছাড়া জায়েদি প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা, মাশরুখ মারিয়াম ৪০০ থেকে ৫০০, কালো মারিয়াম ৫০০ থেকে ৫৫০, নাকাল ২৫০ থেকে ২৬০, বরই ২৫০ থেকে ৩০০, দাব্বাস ২০০ থেকে ২৫০, সাফারি ২৫০, সুগাই ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা।

রিয়াজ উদ্দিন বাজারের মেসার্স বাবুল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. বাবুল প্রথম আলোকে বলেন, বিক্রি একদম কমে গেছে। রমজান শুরু হওয়ার আগে বিক্রি কিছুটা হয়েছিল। দাম বাড়তি হওয়ার কারণেই বিক্রি কম বলে জানান তিনি। বাবুলের দোকানে আধা ঘণ্টা দাঁড়ানোর পর মোহাম্মদ সাইমন নামের এক ক্রেতার সাক্ষাৎ পাওয়া গেল। তিনি ৫০০ গ্রাম বরই খেজুর কেনেন। একফাঁকে মোহাম্মদ সাইমন বলেন, বাজারে সব জিনিসের দামই বাড়তি। কোথাও স্বস্তি নেই। রমজানের প্রথম দিন থেকেই বাড়তি খেজুরের দাম।

এদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা কম দামে আমদানি করে বেশি দরে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বেলা দেড়টার দিকে ফলমন্ডিতে অভিযান পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন। অভিযানে এমন অভিযোগের সত্যতা পান জেলা প্রশাসনের অভিযান পরিচালনাকারীরা। এ কারণে ফলমন্ডির তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করেন তাঁরা।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আল্লাহর রহমত নামের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জায়েদি, নাসার, আল মাদাফ, ফারাহ নামের মধ্যম জাতের খেজুর আমদানি মূল্যের চেয়ে তিন থেকে চার গুণ বেশি দামে বিক্রি করছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই ধরনের গরমিল পাওয়ায় আলী জেনারেল ট্রেডিংকে ১০ হাজার ও ফ্রেশ ফ্রুট গ্যালারিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।