জলবায়ু উদ্বাস্তুদের ফ্ল্যাট ‘প্রভাবশালীদের’, বিতর্কিত সেই বরাদ্দ বাতিল করল সরকার

কক্সবাজারে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য নির্মিত আবাসন প্রকল্পের ফ্ল্যাট বরাদ্দে অনিয়ম নিয়ে গত ২৫ জুন এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল প্রথম আলো

রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে কক্সবাজারের খুরুশকুল এলাকায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের আবাসন প্রকল্পে দেওয়া ফ্ল্যাট বরাদ্দ বাতিল করেছে সরকার। আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মহিবুল হাসান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ৪ হাজার ৪০৯ জনের নামে ফ্ল্যাট বরাদ্দের বিতর্কিত তালিকাটি বাতিল করার কথা জানানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কক্সবাজারে জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্পে (খুরুশকুল) নির্মিত বহুতল ভবনের উপকারভোগী বাছাই, সরকারি ফ্ল্যাট হস্তান্তর ও রক্ষণাবেক্ষণ নীতিমালা-২০২৫ অনুযায়ী এ প্রকল্পে পুনর্বাসনের জন্য ২০১১ সালে প্রণীত ৪ হাজার ৪০৯ জনের তালিকা ত্রুটিপূর্ণ, প্রশ্নবিদ্ধ ও পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ায় বাতিল করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ৪ হাজার ৪০৯ জনের তালিকাটি বাতিল করা হয়েছে। নতুন নির্দেশনার আলোকে প্রকৃত জলবায়ু উদ্বাস্তুদের তালিকা প্রণয়ন করা হবে।

গত ২৫ জুন ‘রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের দখলে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের ফ্ল্যাট’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কক্সবাজার শহরের প্রধান নদী বাঁকখালী। এ নদীর পূর্ব-উত্তর পাড়ের খুরুশকুল এলাকায় গড়ে উঠছে ৪ হাজার ৪০৯ জন জলবায়ু উদ্বাস্তুর জন্য আবাসন প্রকল্প। এখানে ২৫৩ একর জায়গাজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে পাঁচতলাবিশিষ্ট ১৩৭টি ভবন। ২০১৭ সালে ‘খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প’ নামে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালে প্রাথমিকভাবে ৬০০ পরিবারকে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া হয়। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশে প্রথমবারের মতো নেওয়া জলবায়ু উদ্বাস্তুদের আবাসন প্রকল্পে প্রকৃত উদ্বাস্তুদের অধিকাংশেরই ঠাঁই হয়নি। বরং রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের অনেকেই প্রকল্পের ফ্ল্যাট বরাদ্দ পেয়েছেন।

আরও পড়ুন

আজ ওই বরাদ্দ বাতিল হওয়ার পর জলবায়ু উদ্বাস্তু ও কক্সবাজারের সমিতি পাড়ার বাসিন্দা মোস্তফা সরওয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যারা প্রকৃত জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়েও রাজনীতির মারপ্যাঁচে প্রকল্প থেকে বাদ গেছে, তারা আজ সবাই খুশি। আমরা আশা করব, সরকার নতুন করে যে তালিকা করবে, সেখানে যেন যারা ভূমিহীন ও জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের অন্তর্ভুক্ত করে। রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্পে যেন কেউ আর অন্তর্ভুক্ত না হয়।’