নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় নিহত ৭, আহত ৬৯৬

নির্বাচনের পরদিন মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও নৌকা প্রতীকে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় অনেক বাড়িঘরে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেফাইল ছবি: প্রথম আলো

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের ৪১ জেলায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সহিংস এসব ঘটনায় ৭ জন নিহত ও অন্তত ৬৯৬ জন আহত হন। এ ছাড়া চার শতাধিক বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা নিয়ে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ভোট দিতে না যাওয়ায় অনেক ভোটার ও তাঁদের বাড়িঘরে হামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া পরাজিত বা জয়ী দলের প্রার্থী, ভোটার, কর্মী-সমর্থকসহ সংখ্যালঘু, সনাতন ধর্মাবলম্বী ও বেদে সম্প্রদায়ের সদস্যদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

ঝিনাইদহের পোড়াহাটিতে ৫০টি, মাদারীপুরের কালকিনি ও কাউয়াকুড়িতে ১০০, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় ৩০ ও সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে ২০টির বেশি দোকান, বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জান ও মালের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি উল্লেখ করেছে এইচআরএসএস। সংস্থাটি বলছে, এসব ঘটনায় নির্যাতন ছাড়াও নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার, গবাদিপশুসহ আসবাবপত্র লুটপাট হয়েছে।

এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিনে সহিংসতার ঘটনায় মুন্সিগঞ্জ, বরগুনা ও কুমিল্লায় তিনজন নিহত হন। সেদিন ১৬ জন গুলিবিদ্ধসহ দেড় শতাধিক আহত হন। নির্বাচনের দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তারাও আক্রমণের শিকার হন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ৩০ জনের বেশি সাংবাদিক আক্রমণ, লাঞ্ছনা ও হুমকির ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন

হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় সংঘর্ষ, সংঘাত, হত্যা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার অন্তত ৭৫২টি ঘটনায় সারা দেশে ১৭ জন নিহত হয়েছেন। একই সময় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২ হাজার ৫৩৪ জন।

সহিংস এসব ঘটনায় শতাধিক মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৬০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন নির্বাচনের পরে। সাড়ে চার শতাধিক বাড়িঘরে ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়েছে। শতাধিক গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শুধু জানুয়ারি মাসে সহিংসতায় ১২ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১১ জন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থক নেতা ও কর্মী।

সহিংসতা ও এসব ঘটনায় হতাহতের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে এইচআরএসএস। সংস্থাটি সরকার ও সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্বাচনী সহিংসতার সব ঘটনা আমলে নিয়ে দ্রুত নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পরিবারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়ে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়েছে।