অন্যদের তুলনায় ইইউর ঋণ অনেক আকর্ষণীয়

ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিকাব টক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ১০ জুনছবি: সংগৃহীত

চীনের ঋণের প্রতি ইঙ্গিত করে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেছেন, ‘অন্যদের ঋণের শর্ত কী, সেটা জানি না। তবে আমাদের দেওয়া ঋণের শর্ত বেশ ভালো ও আকর্ষণীয়। আর তা বাংলাদেশকে আরও ঋণে আটকাতে চায় না। বরং আমাদের ঋণের প্রস্তাবের সঙ্গে অনুদান ও কারিগরি সহায়তার বিষয়টিও রয়েছে।’

আজ সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিকাব টক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে চার্লস হোয়াইটলি এ মন্তব্য করেন।

ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত মতবিনিময় অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, রোহিঙ্গা সমস্যা ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেন।

বিদেশি ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করেন চার্লস হোয়াইটলি। তিনি বলেন, এশিয়ার অনেক দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের তুলনায় মোট ঋণের পরিমাণ ৮০ শতাংশ। ইইউ দেশগুলোতে এটি ৮০ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশের অবস্থা অত্যন্ত চমকপ্রদ এবং এর অর্থ হচ্ছে ঋণ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ একটি ভালো দেশ।

বাংলাদেশের যে অবস্থা, সেটিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সন্তুষ্ট এবং তারা বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক (ইআইবি) বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। ব্যাংকটি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সহায়তা দিচ্ছে।
চীনের অঞ্চল ও পথের উদ্যোগ (বিআরআই) এবং ইইউর গ্লোবাল গেটওয়ের বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘পত্রপত্রিকায় চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশের ৫০০ কোটি ডলার ঋণের কথা শোনা যাচ্ছে। আমি ওই ঋণের শর্ত কী, সেটা জানি না।’
গ্লোবাল গেটওয়ের প্রসঙ্গ টেনে চার্লস হোয়াইলি বলেন, ‘গ্লোবাল গেটওয়ে একেবারেই আলাদা কারণ এতে সংযুক্তি, অবকাঠামো ও ডিজিটালাইজেশনের ভিন্ন ভিন্ন স্বপ্ন পূরণ করে। আমাদের শর্ত যথেষ্ট ভালো ও আকর্ষণীয়। এ ছাড়া ইইউর ঋণের মধ্যে শুধু অর্থ নয়, কারিগরি সহায়তা ও অনুদানের বিষয়ও জড়িত। এর মাধ্যমে আমরা সত্যিকারের অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠা করি। আর পুরো প্রক্রিয়া স্বচ্ছতা ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার মাধ্যমে হয়ে থাকে।’

গত এক দশকে বাংলাদেশের পরিবর্তনের প্রসঙ্গ টেনে চার্লস হোয়াইটলি বলেন, ‘১০ বছরের আগের বাংলাদেশ আর বর্তমান বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। বিশেষ করে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিসহ নানা খাতে বর্তমান বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশ নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জলবায়ুসংকট মোকাবিলা করা। আমরা সবাই এই সংকট মোকাবিলায় সঙ্গী।’

চার্লস হোয়াইটলি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ৮ থেকে ৯ বছর আগে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি আক্রমণ হয়েছিল। এর পর থেকে বাংলাদেশ জঙ্গি ও উগ্রবাদ প্রতিরোধে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করে চার্লস হোয়াইটলি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান প্রশংসনীয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সব সময় পাশে থাকবে। এ সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার দেবে।
রাষ্ট্রদূত জানান, বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে দ্রুত প্রতিরক্ষা ও সামরিক সংলাপ শুরু হবে।
ডিকাব সভাপতি নূরুল ইসলাম হাসিবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান।