এক্সিম ব্যাংকের ৬১৫ কোটি ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ, নজরুল মজুমদারের নামে দুদকের মামলা
এক্সিম ব্যাংক থেকে ৬১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বিভিন্ন কৌশলে আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও নাসা গ্রুপের মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের উপপরিচালক মো. আল-আমিন গতকাল বুধবার ঢাকার সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১–এ এজাহার দায়ের করেন। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন।
দুদক জানায়, ‘ফ্লামিংগো এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নেওয়া এই বিপুল ঋণের প্রকৃত সুবিধাভোগী হয়েছেন নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তাঁর পরিবার।
এজাহারে বলা হয়, কাগুজে প্রতিষ্ঠানের কোনো বাস্তব যাচাই, পরিদর্শন বা সহায়ক জামানত ছাড়াই এক্সিম ব্যাংক ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করে। প্রকৃত ব্যবসায়িক কাজে অর্থ ব্যবহার না হয়ে কাগুজে লেনদেন ও মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে তা নাসা গ্রুপ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। ব্যাংকের কর্মকর্তারা বিষয়টি জানলেও অসৎ উদ্দেশে সহযোগিতা করেছেন।
দুদকের অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল মো. মোশারফ হোসেন মাত্র ১০ হাজার টাকা জমা দিয়ে এক্সিম ব্যাংকের টাওয়ার শাখায় ফ্লামিংগো এন্টারপ্রাইজের নামে হিসাব খোলেন। এর তিন দিন আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে একটি ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করা হয়, যেখানে ব্যবসা শুরুর তারিখ উল্লেখ করা হয় ২০২৪ সালের ৬ এপ্রিল। ব্যবসা ও মালিকের ঠিকানা হিসেবে নাসা গ্রুপের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়।
২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত ধাপে ধাপে ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ৬১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করা হয়। পরে ফ্লামিংগো এন্টারপ্রাইজের হিসাবে জমা হওয়া অর্থ বিভিন্ন কাগুজে বিল ও ক্যাশ মেমোর মাধ্যমে বৈধ দেখানোর চেষ্টা করা হয়। তবে বাস্তবে এসব অর্থ মোশারফ হোসেন স্বাক্ষরিত চেকের মাধ্যমে নাসা গ্রুপের কর্মচারী ও ঘনিষ্ঠদের নামে উত্তোলন করে নগদ জমা বা ট্রান্সফারের মাধ্যমে নাসা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, যেমন মদিনা ডেটস অ্যান্ড নাটস, এমএনসি অ্যাপারেলস লিমিটেডে স্থানান্তর করা হয়। অবশিষ্ট অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে পে-অর্ডার করা হয়।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বাই মুয়াজ্জাল’ ও ‘আইবিবি’ ঋণ এখনো পরিশোধ করা হয়নি। আর ‘এমটিআর’ ঋণের অর্থ এলসির মাধ্যমে বিদেশি রপ্তানিকারকের ব্যাংকে পাঠানো হলেও নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যে তা ফেরত দেওয়া হয়নি।
দুদকের ভাষ্য অনুযায়ী, এক্সিম ব্যাংকের টাওয়ার শাখার কর্মকর্তারা (ম্যানেজার, ইনভেস্টমেন্ট ইনচার্জ, সেকেন্ড অফিসারসহ) ব্যবসার বাস্তব যাচাই, স্টক পরিদর্শন, লাভ-ক্ষতি বিশ্লেষণ ছাড়াই শুধু পণ্য জামানত দেখিয়ে ঋণ অনুমোদনের সুপারিশ করেন। আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রধান কার্যালয় যাচাই না করেই প্রস্তাব অনুমোদন করে বোর্ডে পাঠায়। পরে পরিচালনা পর্ষদও কোনো প্রশ্ন না তুলে ঋণ অনুমোদন করে।
মামলার আসামি কারা
নজরুল ইসলাম মজুমদার ছাড়াও এ মামলায় আসামিদের মধ্যে আছেন ফ্লামিংগো এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. মোশারফ হোসেন, নাসা বেসিকস লিমিটেডের এমডি ওয়ালিদ ইবনে ইসলাম, মদিনা ডেটস অ্যান্ড নাটসের স্বত্বাধিকারী মোজাম্মেল হোসাইন, জান্নাত এন্টারপ্রাইজের মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, এমএনসি অ্যাপারেলস লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডেপুটি এমডি) আবুল কালাম ভূঁইয়া, এক্সিম ব্যাংকের ম্যানেজার (এসভিপি) মোহাম্মদ আশরাফুল হক, অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এভিপি) আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক এসপিও ও ইনভেস্টমেন্ট অফিসার এবং বর্তমান যমুনা ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. হুমায়ুন কাদের প্রমুখ।