নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন করল সরকার, আগের ৭ জন বাদ

বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ভেঙে দিয়ে ১২ সদস্যের নতুন বোর্ড পুনর্গঠন করে দিয়েছে সরকার। পুরোনো ট্রাস্টি বোর্ডের সাতজনকে নতুন বোর্ডে রাখা হয়নি। এঁদের মধ্যে চারজন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় কারাগারে আছেন।  

‘দুর্নীতি, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ ও জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতার’ অভিযোগে ১৬ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ড ভেঙে দেয় সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আজ মঙ্গলবার ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠনের বিষয়ে আদেশ জারি করে।

পুনর্গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডে বাদ পড়েছেন বিদায়ী বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ এবং সদস্য বেনজির আহমেদ, আজিজ আল কায়সার, এম এ কাশেম, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান ও নুরুল এইচ খান। এর মধ্যে বেনজির আহমেদ, এম এ কাশেম, রেহানা রহমান ও মোহাম্মদ শাহজাহান আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে কারাগারে আছেন। দুদকের ওই মামলায় ওই চারজনসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়, যাঁদের মধ্যে আজিম উদ্দিনও রয়েছেন। বাকি সদস্যদের কী কারণে বাদ দেওয়া হয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে তা উল্লেখ করা হয়নি।

পুনর্গঠিত বোর্ডে উদ্যোক্তা ট্রাস্টি হিসেবে আছেন টি কে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ কালাম, কনকর্ড ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও এমডি এস এম কামাল উদ্দিন, আবুল খায়ের গ্রুপের এমডি আবুল কাশেম, মিনহাজ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক ইয়াসমিন কামাল, বেক্সিমকো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান এ এস এফ রহমান ও ইউনাইটেড ফসফরাস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফৌজিয়া নাজ। তাঁরা আগের বোর্ডেও ছিলেন। নতুন ট্রাস্টি বোর্ডে শিক্ষাবিদ হিসেবে আছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম। আগের বোর্ডে তিনি উপাচার্যের পদাধিকার বলে সদস্য ছিলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে, আইনানুযায়ী দায়িত্বরত উপাচার্যও বোর্ডের এই তালিকায় যুক্ত হবেন।

নতুন বোর্ডে উদ্যোক্তা ট্রাস্টির উত্তরাধিকারী হিসেবে রাখা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জুনাইদ কামাল আহমাদ, ইনকনট্রেড লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর হারুন এবং উদ্যোক্তা জাভেদ মুনির আহমেদ, ফাইজা জামিল ও শীমা আহমেদ। এঁদের মধ্যে পরের তিনজন বোর্ডে নতুন যুক্ত হয়েছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওবি) কিছু সদস্য এবং কর্মকর্তা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িত বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।

জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্বে) অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম আজ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের একাধিক তদন্তেই এসব অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।
অবশ্য, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভেঙে দেওয়া বোর্ডের একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ইউজিসির তদন্তের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। নতুন বোর্ড কীভাবে হলো, তা–ও জানেন না। আর উপাচার্যকে শিক্ষাবিদ হিসেবে সদস্য করা আইনের মধ্যে পড়ে কি না, সেটিও প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি কেনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্য দুদকের মামলায় কারাগারে আছেন। আর কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়ে সরকারি নথিতে জালিয়াতির ঘটনায় একজন ট্রাস্টির বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

আদেশে আরও বলা হয়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ট্রাস্টি বোর্ড পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ করতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা ও পরিচালনা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা দেখা দিলে বা স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত ও শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে, স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য (রাষ্ট্রপতি) ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে প্রয়োজনীয় আদেশ ও নির্দেশ দিতে পারেন।

আদেশে বলা হয়, এ অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও সরকারের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সম্মিলিত সভার সুপারিশ বিবেচনায় আচার্যের অনুমোদনে ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে।