যাত্রী পারাপারের নৌপথে দিব্যি চলছে বেসরকারি পণ্যবাহী ফেরি

ঢাকা-ভোলা নৌপথে চলছে এমকে শিপিং লাইনসের ফেরিছবি: সংগৃহীত

ঢাকা-ভোলা নৌপথ যাত্রী পারাপারের জন্য স্বীকৃত। এই নৌপথ ফেরি চলাচলের জন্য নয়। তবে দীর্ঘ এই নৌপথে ব্যক্তিমালিকানাধীন এমকে শিপিং লাইনসের ফেরি যাত্রী ও ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি পণ্যবাহী ট্রাক পরিবহন করছে। এতে বিআইডব্লিউটিসির আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

তাই বেসরকারিভাবে ফেরিতে পণ্যবাহী যানবাহন পরিবহন বন্ধে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে তিন দফায় চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। তবু তা বন্ধ হয়নি।

এমকে শিপিং লাইনসের এমভি কার্নিভাল ক্রুজ ও এমভি কার্নিভাল ওয়েভ নামের দুটি ফেরি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পন্টুন ব্যবহার করে চলাচল করছে। ঢাকা-ভোলা নৌপথে এই নৌযান দুটি দিনে একটি করে ট্রিপ দিয়ে থাকে বলে জানিয়েছে মালিকপক্ষ। গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এই সেবার উদ্বোধন করেন।

আমরা দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। এই সেবা যদি নিয়মের মধ্যে থাকে, তাহলে চলবে, না থাকলে চলবে না
মোস্তফা কামাল, জ্যেষ্ঠ সচিব, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়

জানতে চাইলে এমকে শিপিং লাইনসের পরিচালক রাসেল খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পণ্যবাহী যানবাহন পরিবহনের সক্ষমতা আছে বলেই বিআইডব্লিউটিএ আমাদের অনুমতি দিয়েছে। অনুমতি ছাড়া দেশে কোনো জলযান চলতে পারে না।’
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা-ভোলা নৌপথে ফেরিতে বেসরকারি এই সেবা বন্ধে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে গত বছরের ৯ অক্টোবর প্রথম চিঠি দেয় বিআইডব্লিউটিসি। তারপর চিঠি দেয় ওই বছরের ২০ নভেম্বর। সর্বশেষ চিঠি দিয়েছে গত ১৮ মার্চ।

সর্বশেষ চিঠি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোস্তফা কামাল বরাবর পাঠান বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান এ কে এম মতিউর রহমান। বিআইডব্লিউটিসির চিঠি পেয়েছেন জানিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। এই সেবা যদি নিয়মের মধ্যে থাকে, তাহলে চলবে, না থাকলে চলবে না।’

সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, ঢাকা-ভোলা মূলত যাত্রী পারাপারের একটি স্বীকৃত নৌপথ। এটি ফেরি চলাচলের কোনো পথ নয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকার পরও সেবাটি বন্ধ না করে ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পণ্যবাহী যানবাহন পারাপার করছে। এই রুটে ৮ মার্চ থেকে এমভি কার্নিভাল ওয়েভ শুধু পণ্যবাহী যানবাহন পারাপারের জন্য ফেরি পরিচালনা শুরু করেছে।

চিঠিতে বলা হয়, বিআইডব্লিউটিসির আয়ের বেশির ভাগ আসে ফেরিসেবা থেকে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, চাঁদপুর-শরীয়তপুর রুটে যানবাহন পারাপার আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। যার কারণে গত ২০২২-২৩ অর্থবছর বিআইডব্লিউটিসি ৩৯ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে।

বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। মন্ত্রণালয় কমিটি করে দিয়েছে, সেটি কাজ করছে। সেই কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া গেলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা, চেয়ারম্যান, বিআইডব্লিউটিএ

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এই ব্যক্তিমালিকানাধীন সেবা চালু থাকলে বিআইডব্লিউটিসির ভোলা-লক্ষ্মীপুর ও লাহারহাট-ভেদুরিয়া ফেরিসেবায় প্রভাব পড়বে। লোকসানের বোঝা আরও বাড়বে। বিভিন্ন সময় অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফেরি চালুর উদ্যোগ নিলেও সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য তা কখনো অনুমোদন দেয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে।

এমকে শিপিং লাইনসকে যাত্রীর পাশাপাশি যাত্রীর সঙ্গে থাকা যাত্রীবাহী গাড়ি পারাপারের অনুমোদন থাকলেও তারা পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপ ও কাভার্ড ভ্যান পারাপার করছে। ফলে বিআইডব্লিউটিসির ইলিশা-মজুচৌধুরীর হাট ও লাহারহাট-ভেদুরিয়া ফেরিসেবার আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে আগের দুটি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঢাকা-ভোলা নৌপথে এমকে শিপিং লাইনসকে সাধারণ রুট পারমিট দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যখন অভিযোগ এসেছে, বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। মন্ত্রণালয় কমিটি করে দিয়েছে, সেটি কাজ করছে। সেই কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া গেলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’