দেশের ইতিহাস সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে দেশের তরুণ প্রজন্ম

বক্তব্য দেন অধ্যাপক সুগত বসুছবি: জাহিদুল করিম

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার ২৮ বছর পূর্ণ হলো ২২ মার্চ। এ উপলক্ষে আয়োজিত পাঁচ দিনের অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও স্মৃতি সংরক্ষণ’ শীর্ষক বিশেষ অনুষ্ঠান। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের এ আয়োজনে স্মারক বক্তব্য দেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শরৎচন্দ্র বসুর পৌত্র খ্যাতিমান ইতিহাসবিদ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুগত বসু।

আলোচনার শুরুতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী বলেন, ২৮ বছর আগে সেগুনবাগিচায় এক ঝোড়োসন্ধ্যায় যাত্রা শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের। আটজন ট্রাস্টি উদ্যোগ নিয়েছিল বটে, তবে এই জাদুঘরের ব্যাপক পরিসর, আন্তর্জাতিকভাবে এত পরিচিতির পেছনে আছে দেশের সাধারণ মানুষের ভালোবাসা। সাফল্যের পেছনে আছে দেশের তরুণদের সম্পৃক্ততা।

গবেষক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক এবারের স্মারক বক্তা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুগত বসুর পরিচিতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অনেক রকমভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আছে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর পরিবারের। আর ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মকে নতুনভাবে চেনাচ্ছেন সুগত বসু।

অধ্যাপক সুগত বসু ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও স্মৃতি সংরক্ষণ’ স্মারক বক্তৃতা দেন। সেখানে বারবার গুরুত্ব পেয়েছে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় অটল মনোভাবের কথা।

সুগত বসুর স্মৃতিকথায় উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে শরণার্থী শিবির, আহত সৈনিকদের সেবা, কলকাতায় তাদের বাড়ির ভেতর তৈরি মেডিকেল ক্যাম্পের স্মৃতিকথা। ডক্টর নীলিমা ইব্রাহিমের কলকাতায় নেতাজি ভবনে উপস্থিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিনিধিত্ব করার ইতিহাস তুলে ধরেন তিনি।

নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চার উৎসাহ দিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সব বক্তৃতা নতুন প্রজন্মের সবার পড়া উচিত। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে ১৯৭১ সালে দুই বাংলার সাহিত্য ও সংগীতের জগতে এক মেলবন্ধন তৈরি হওয়ার কথা। সবশেষে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ গানটি পরিবেশন করে বক্তব্য শেষ করেন অধ্যাপক সুগত বসু।  

এরপর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রকাশনার কয়েকটি বই আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া হয় তাঁর হাতে। নিজের প্রকাশিত বই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টিদের হাতে তুলে দেন সুগত বসু।

মুক্তিযুদ্ধের ট্রাস্টি ও সদস্যসচিব, নাট্যজন সারা যাকের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের গত এক বছরের অর্জন তুলে ধরেন। তিনি জানান, বৈশ্বিক নানা সংকটের মধ্যেও  গত এক বছরে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ১১৮টি সফল অনুষ্ঠান করেছে। জাদুঘরের আর্কাইভে এখন মুক্তিযুদ্ধের ৫৫ হাজার প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য সংগ্রহে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ভাষ্যগুলো সংগ্রহ করেছেন তরুণ শিক্ষার্থীরা। দেশের ইতিহাস সংরক্ষণে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে সারা যাকের বলেন, জাদুঘরের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে এই ভাষ্যগুলো নিয়ে গবেষণা কাজ।

সবশেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সংসদ সদস্য, নাট্যজন ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি আসাদুজ্জামান নূর। তিনি বলেন ইতিহাস বিকৃতি ও বিস্মৃতি এ দুইয়ের বিরুদ্ধেই লড়াই করছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।