এলএনজি সরবরাহে মার্কিন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই

দেশে এলএনজি সরবরাহ বাড়াতে রাজধানীর একটি হোটেলে বুধবার এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)
ছবি: প্রথম আলো

দেশে গ্যাসের চাহিদা পূরণে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি আরও বাড়ানো হচ্ছে। বেসরকারি খাতে এলএনজি সরবরাহের জন্য এবার মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। ২০২৬ সাল থেকে পরবর্তী ১৫ বছর ধরে এলএনজি সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি।

রাজধানীর একটি হোটেলে বুধবার এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। পেট্রোবাংলার পক্ষে বোর্ড সচিব রুচিরা ইসলাম ও এক্সিলারেট এনার্জির পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট র‍্যামন ওয়াংদি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

চুক্তি অনুসারে বছরে ১০ থেকে ১৫ লাখ টন এলএনজি সরবরাহ করবে এক্সিলারেট এনার্জি। ২০২৬ সাল থেকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত এই এলএনজি সরবরাহ করবে তারা। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামের ১৩ দশমিক ৩৫ শতাংশের সঙ্গে শূন্য দশমিক ৩৫ ডলার যুক্ত হয়ে নির্ধারণ করা হবে প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম।

কক্সবাজারের মহেশখালীতে এক্সিলারেটের ভাসমান টার্মিনালের রূপান্তর সক্ষমতাও বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে দিনে ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস রূপান্তরের সক্ষমতা আছে প্রতিষ্ঠানটির। জানুয়ারি থেকে তা ৬০ কোটি ঘনফুটে উন্নীত করা হবে। এ বিষয়ে পেট্রোবাংলা ও এক্সিলারেটের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে বুধবার। এ ছাড়া পায়রা বন্দরে একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের টার্মশিট স্বাক্ষরিত হয়েছে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক–ই–ইলাহী চৌধুরী বলেন, গত ৩ বছরে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশকে শুধু জ্বালানি খাতেই অতিরিক্ত ১৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়েছে। অর্জনগুলো সুসংগঠিত করতে পারলে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সময়ের ব্যাপার। জ্বালানির বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এ সময় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের যথাযথ বিকাশের জন্য আগামী ১০ বছরে ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। প্রযুক্তিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। বিশাল বিনিয়োগের সুযোগ হবে। গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানে কাজেও ব্যাপক বিনিয়োগ আসবে। বিশ্বের নামীদামি কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।

অনুষ্ঠানে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের চার বিলিয়ন ডলারের সরাসরি বিনিয়োগ রয়েছে বাংলাদেশে, যা বৈদেশিক বিনিয়োগের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভালো সম্পর্ক রয়েছে, সেটা আমরা এগিয়ে নিতে চাই। এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে এলএনজির দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিটি ১৫ বছর বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

এলএনজি আমদানির পর তা রূপান্তরের মাধ্যমে গ্যাস পাইপলাইনে সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে এলএনজি রূপান্তরের জন্য মহেশখালীতে দুটি ভাসমান টার্মিনাল আছে। এর একটি পরিচালনা করে এক্সিলারেট এনার্জি ও অপরটি সামিট গ্রুপ। টার্মিনাল সেবার পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদে এলএনজি সরবরাহের জন্য এ দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবই বিবেচনায় নেয় সরকার। এর আগে গত আগস্টে অর্থনৈতিক বিষয়–সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এ বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

দেশীয় গ্যাস কমে আসায় গ্যাসের চাহিদা পূরণে ২০১৮ সালে দেশে এলএনজি আমদানি শুরু হয়। এখন পর্যন্ত এলএনজি আমদানি হয়েছে পুরোটাই সরকারি সংস্থার মাধ্যমে। বর্তমানে দীর্ঘ মেয়াদে দুটি চুক্তির আওতায় ওমান ও কাতার থেকে এলএনজি আমদানি করে সরকার। এলএনজির আমদানি বাড়াতে এ দুটি দেশের সঙ্গে নতুন করে চলতি বছরে আরও দুটি চুক্তি করা হয়েছে। নতুন চুক্তির আওতায় তারা এলএনজি সরবরাহ শুরু করবে ২০২৬ সালে। এর বাইরে খোলাবাজার থেকে চাহিদা বুঝে বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানি থেকে নিয়মিত এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে।