সেই জসিম এখন কেমন আছেন

দশ বছর আগের ঘটনা। মামলার আসামি না হয়েও পুলিশ গ্রেপ্তার করে সিএনজি অটোরিকশাচালক জসিম উদ্দিনকে। প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। সেই জসিম উদ্দিন এখন কেমন আছেন? কীভাবে কাটছে তাঁর দিনকাল? 

জসিম উদ্দিন

দশ বছর আগের ঘটনা। মামলার আসামি না হয়েও পুলিশ গ্রেপ্তার করে সিএনজি অটোরিকশাচালক জসিম উদ্দিনকে। প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। গত ৩০ অক্টোবর জসিমের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বলেন, ‘আসল আসামি জসিমের পরিবর্তে পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে। প্রথম আলো নিউজ করলে আমি মুক্ত হই। এখন ভালো আছি। তবে পুলিশ দেখলে এখনো ভয় পাই। আমার লিভারের সমস্যা।’

এখন অটোরিকশা চালিয়ে স্ত্রী, চার ছেলেমেয়ে নিয়ে দিন কাটছে জসিমের। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায়। ঘটনার শুরু ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে। কারা ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, লোহাগাড়ার পারভীন আক্তার নামের এক নারী তাঁর স্বামী জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে যৌতুকের মামলা করেন। পরে আদালত বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিল জসিমের বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। আদালত আসামি আবুল কাশেমের ছেলে জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

জসিম উদ্দিন

এই পরোয়ানামূলে লোহাগাড়া থানা-পুলিশ একই বছরের ৩১ আগস্ট উপজেলার আবুল হোসেনের ছেলে জসিম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। পরে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে এই প্রতিবেদক জানতে পারেন কারাগারে যাওয়া জসিম নিরপরাধ। আসল জসিমকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি। ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ‘পুলিশের ভুলে কারাবাস’ শিরোনামে প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠায় জসিমের ছবিসহ প্রতিবেদন ছাপা হয়। ওইদিনই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক প্রকাশিত প্রতিবেদনের সত্যতা পেয়ে জসিমকে মুক্তির আদেশ দেন। আদালতে জসিম বলেন, ‘বউ-পোয়া ন খায় আছে। আরে ছাড়ি দ। আই হোসনর পোয়া, কাশেমের ন।’ আদেশ শোনার পর আসামির কাঠগড়ায় থাকা জসিম আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

জসিম উদ্দিন

পরে আদালতে দেওয়া পুলিশের এক প্রতিবেদনে পুরো ঘটনাটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নিরপরাধ জসিমকে ধরা তাদের ইচ্ছাকৃত ছিল না। এটা ছিল তাদের ভুল।

জসিমের স্ত্রী নাসিমা আক্তার বলেন, ‘ছেলেমেয়ে বড় হচ্ছে। আপনারা সত্যটি তুলে না ধরলে সারাজীবন এই কলঙ্ক বয়ে বেড়াতে হতো। স্বামী কারাগারে থাকলে সংসার তছনছ হয়ে যেত।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমার স্বামী বুক ফুলিয়ে হাঁটে। সবাই জানে তিনি নিরপরাধ। এখনো আমরা প্রথম আলোর জন্য দোয়া করি। যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন দু’হাত তুলে দোয়া করে যাব।’