যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা থেকে দেশ পিছিয়ে

  • ২০২১ সালে দেশে প্রতি ১২ মিনিটে একজন ব্যক্তি যক্ষ্মায় মারা গেছেন।

  • ওই বছর দেশে যক্ষ্মায় ৪২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।

যক্ষ্মা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়
ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কৌশলপত্র অনুযায়ী, আগামী দুই বছরের মধ্যে বছরে যক্ষ্মায় মৃত্যু ১৮ হাজারে নামাতে হবে। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা থেকে দেশ এখনো বেশ পিছিয়ে।

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন এমন ব্যক্তিরা বলছেন, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সাফল্য আছে। তবে যক্ষ্মা এখনো জনস্বাস্থ্য সমস্যা। এখনো প্রতিবছর বহু মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মারাও যাচ্ছেন। পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত ও চিকিৎসার আওতা এবং জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।

যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে যক্ষ্মা সম্পর্কে সচেতনতারও অভাব রয়েছে।
সায়েরা বানু, আইসিডিডিআরবির সিনিয়র সায়েন্টিস্ট
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘হ্যাঁ! আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারি!’

যক্ষ্মা রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে সারা বিশ্বের মতো আজ ২৪ মার্চ দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘হ্যাঁ! আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারি!’

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মায় মৃত্যু ৭৫ শতাংশ (২০১৫ সালের তুলনায়) কমাতে হবে। ২০১৫ সালে যক্ষ্মায় মৃত্যু ছিল ৭৩ হাজার। সে হিসেবে আগামী দুই বছরের মধ্যে বছরে যক্ষ্মায় মৃত্যু ১৮ হাজারে নামাতে হবে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা থেকেই বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে রয়েছে। আর ২০২৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা সংক্রমণ ৫০ শতাংশ (২০১৫ সালের তুলনায়) কমাতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, ২০২১ সালে দেশে প্রতি ১২ মিনিটে একজন ব্যক্তি যক্ষ্মায় মারা গেছেন। সংস্থার সর্বশেষ বৈশ্বিক যক্ষ্মা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে যক্ষ্মায় ৪২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালে ৩ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ নতুন করে যক্ষ্মার জীবাণুতে আক্রান্ত হয়। আর ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় (এমডিআর) আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সাড়ে চার হাজার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তৈরি করা যক্ষ্মা এবং ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার প্রকোপ বেশি এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম আছে।

এ বিষয়ে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডাইরেক্টর মাহফুজুর রহমান সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘লক্ষ্যমাত্রা একটু বাড়িয়ে ধরা হয়েছিল। এটি অর্জনে নানা কার্যক্রম চলছে। লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি যেতে পারব বলে আশা করছি। তবে জনগণের মধ্যে এখনো যক্ষ্মা নিয়ে সচেতনতা কম।’ তিনি আরও বলেন, এখন যক্ষ্মা পরীক্ষার আওতা বেড়েছে। পরীক্ষা ও চিকিৎসা বিনা মূল্যে পাওয়া যায়, তাই উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করানো উচিত।

বাংলাদেশে ১৯৬৫ সালে প্রথম জাতীয় যক্ষ্মা কর্মসূচি নেওয়া হয়। ১৯৮০ থেকে ৮৬ সাল পর্যন্ত যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শক্তিশালীকরণে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সরকার। ২০১১ সালে এসে সরকার যক্ষ্মাকে আরও গুরুত্ব দিতে সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কৌশল সংশোধন করে। ২০২১ সালে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়।

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে কার্যকরভাবে যক্ষ্মা মোকাবিলায় দ্রুত রোগী শনাক্ত করা প্রয়োজন। চিহ্নিত রোগীদের চিকিৎসার ফলোআপ, কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের যক্ষ্মাবিষয়ক প্রশিক্ষণের দিকে আরও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

দেশে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করছে আইসিডিডিআরবি। আইসিডিডিআরবির সিনিয়র সায়েন্টিস্ট সায়েরা বানু প্রথম আলোকে বলেন, যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে যক্ষ্মা সম্পর্কে সচেতনতারও অভাব রয়েছে।

যক্ষ্মায় যে এখনো মানুষ আক্রান্ত হয়, যক্ষ্মার সেবা যে বিনা মূল্যে পাওয়া যায়—এটা অনেকেই জানে না। আর যক্ষ্মা মোকাবিলায় শুধু সরকার বা যক্ষ্মা নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থার উদ্যোগই যথেষ্ট নয়। বরং সাধারণ জনগণ, সুশীল সমাজ ও বেসরকারি খাতকেও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে।