বিজ্ঞান উৎসবের ঢাকা আঞ্চলিক পর্ব উদ্বোধন করল রোবট ‘ওয়ালি’

বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসবের ঢাকা আঞ্চলিক পর্বের উদ্বোধনী আয়োজনে রোবট ওয়ালি। শনিবার, রাজধানীর মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণেছবি: প্রথম আলো

বিজ্ঞানী হওয়া সাধনার ব্যাপার। অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়। তাই স্কুলপর্যায় থেকেই বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে থাকতে হবে—এমন বার্তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসব।

আজ শনিবার সকাল আটটায় রাজধানীর মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে শুরু হয় উৎসবের ঢাকা আঞ্চলিক পর্ব।

বেলুন উড়িয়ে এবং জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে বিজ্ঞান উৎসব উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করে একটি রোবট, যার নাম ‘ওয়ালি’।

উদ্বোধনী আয়োজনে মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও ভেন্যুপ্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারজানা শাকিল এ আয়োজনের অংশ হতে পেরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এ ধরনের আয়োজন জ্ঞান ও প্রতিভার বিকাশের সুযোগ তৈরি হয় জানিয়ে তিনি অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানান।

বিকাশের চিফ এক্সটার্নাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মেজর জেনারেল (অব.) শেখ মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে জাতি হিসেবে পিছিয়ে থাকতে হবে। তাই উদ্ভাবনের সঙ্গে নিজেদের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখতে হবে। বিকাশ সামনেও এ ধরনের উদ্যোগ জারি রাখবে বলে জানান।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, ‘জ্ঞান হলো আলো। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে এ আলো আসতে হবে। বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে।’ চালকবিহীন গাড়িতে চড়ার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, অচিরে অনেক দেশ বিদ্যমান গাড়িগুলো ব্যবহার করবে না। এই প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে হবে। প্রকৃত বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে।

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আরশাদ মোমেন বলেন, ‘বিজ্ঞানচর্চা করতে গেলে অনেক সময় লাগে। এতে ভুল–ত্রুটি থাকে। পথ অনেক বড়। হতাশ হওয়া যাবে না। সাফল্য আসবেই।’

বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন করা হয় বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসবের ঢাকা আঞ্চলিক পর্ব। শনিবার, রাজধানীর মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

কার্টুনিস্ট ও রম্য পত্রিকা ‘উন্মাদ’-এর সম্পাদক আহসান হাবীব এ সময় শিশু–কিশোরদের প্রতি বেশি বেশি বই পড়ার আহ্বান জানান।

উদ্বোধনী আয়োজনে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এবং কিশোর আলোর সম্পাদক কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, বিজ্ঞান মেলা ও উৎসব মানুষের জীবন পাল্টে দিতে পারে। এখান থেকে অনেক বড় বিজ্ঞানী এ দেশ পাবে বলেও তিনি আশাপ্রকাশ করেন।

বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করানোর দরকার। নয়তো আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে। অন্যদিকে বিশ্ব এগিয়ে যাবে। পেছনে থাকা যাবে না। বিজ্ঞানমনস্কতা স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করতে হবে। বিজ্ঞানী হতে গেলে প্রচুর বই পড়তে হবে।

খেলাধুলার সঙ্গে বিজ্ঞান ওতপ্রোতভাবে জড়িত উল্লেখ করে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার হাবিবুল বাশার বলেন, ক্রিকেটে অনেক বেশি বিজ্ঞানের ব্যবহার হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কিছুটা পিছিয়ে আছে।

বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসবের ঢাকা আঞ্চলিক পর্বের উদ্বোধনী আয়োজনে অতিথিরা। শনিবার, রাজধানীর মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

বিজ্ঞান বক্তা আসিফ বলেন, বিজ্ঞান শেখার এখনই সবচেয়ে ভালো সময়। মস্তিষ্ককে প্রস্তুত করতে হবে। এ ধরনের আয়োজন আরও বাড়ুক।

সারা দেশের স্কুলশিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি উৎসাহী করে তুলতে আয়োজন করা হয়েছে বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসব। ঢাকা আঞ্চলিক পর্বে ১২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেট বিভাগে অনুষ্ঠিত হবে উৎসবের আঞ্চলিক পর্ব। সবশেষে জাতীয় পর্বের মাধ্যমে শেষ হবে এ আয়োজন।

উৎসবে ষষ্ঠ-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রজেক্ট প্রদর্শনী ও কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারছে। প্রজেক্ট প্রদর্শনীতে একটি ক্যাটাগরি ও কুইজ প্রতিযোগিতায় দুটি ক্যাটাগরি রয়েছে। কুইজে নিম্নমাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে অংশ নিয়েছে ষষ্ঠ-অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, আর মাধ্যমিক ক্যাটাগরিতে অংশ নিয়েছে নবম-দশম শ্রেণি ও চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। শুধু নিবন্ধনকারী শিক্ষার্থীরা এই দুই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে।

দর্শণার্থীদের সামনে নিজেদের বিজ্ঞান প্রজেক্ট উপস্থাপন করছে শিক্ষার্থীরা। শনিবার, রাজধানীর মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

বিজ্ঞান উৎসবে প্রজেক্ট প্রদর্শনী ও কুইজ প্রতিযোগিতা হবে। আঞ্চলিক উৎসবে কুইজের প্রতি ক্যাটাগরিতে ১০ জন এবং প্রজেক্টে সেরা ১০টি দলকে পুরস্কৃত করা হবে। যারা জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেবে।

আঞ্চলিক পর্যায়ে বিজয়ীদের জন্য থাকছে সার্টিফিকেট, মেডেল, বই, বিজ্ঞান বাক্সসহ আকর্ষণীয় পুরস্কার। সব শেষে জাতীয় পর্বের বিজয়ীদের জন্য থাকছে ল্যাপটপ, ট্যাবসহ নানা পুরস্কার। উৎসবজুড়ে থাকছে বিজ্ঞান ম্যাজিক, রোবট প্রদর্শনী, প্রশ্নোত্তর পর্বসহ অনেক মজার আয়োজন।

বিজ্ঞান উৎসবের যেকোনো খবর জানতে চোখ রাখুন bigganchinta.com–এ, বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসব ও বিজ্ঞানচিন্তার ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে, প্রথম আলোয় এবং বিজ্ঞানচিন্তার প্রিন্ট সংস্করণে।