বিজয়ের ডিসেম্বর দেশে দেশে
ফিলিপাইন: ল্যাপু-ল্যাপুর তলোয়ারে ঔপনিবেশিকতার প্রথম পরাজয়
ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে 'বিজয় দিবস' বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে তুলে ধরছে, কীভাবে তারা সেই দিনটিকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।
ডিসেম্বর মাস আমাদের বিজয়ের মাস, কিন্তু এই বিজয়ের চেতনার শিকড় ছড়িয়ে আছে ইতিহাসের অনেক গভীরে। আজ ২১ ডিসেম্বর, আমাদের এই বিজয়যাত্রায় আমরা ফিলিপাইনের এমন এক বীরত্বগাথা শুনব, যা এশিয়ার মাটিতে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে প্রথম সফল প্রতিরোধের গল্প। যদিও ঐতিহাসিকভাবে যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল ১৫২১ সালের এপ্রিলে, কিন্তু ফিলিপাইনের জাতীয় চেতনায় বিজয়ের এই স্মৃতি প্রতিদিন, প্রতি মাসে উজ্জ্বল। আমাদের ধারাবাহিক আয়োজনের অংশ হিসেবে আজ আমরা স্মরণ করছি সেই কিংবদন্তি যোদ্ধা ল্যাপু-ল্যাপুকে।
স্প্যানিশ অভিযাত্রী ফার্দিনান্দ ম্যাগেলান তখন বিশ্বভ্রমণে বের হয়েছেন। উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্যের নামে স্পেনের আধিপত্য বিস্তার করা। ফিলিপাইনের অনেক দ্বীপের শাসকেরা ম্যাগেলানের বশ্যতা স্বীকার করে নিলেও মাকতান দ্বীপের সর্দার ল্যাপু-ল্যাপু মাথা নত করতে অস্বীকার করেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘আমরা কারও দাসত্ব মানব না।’ ক্ষুব্ধ ম্যাগেলান তাঁর আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত বাহিনী নিয়ে মাকতান আক্রমণ করেন।
কিন্তু ল্যাপু-ল্যাপুর হাতে ছিল দেশপ্রেমের ইস্পাতকঠিন মনোবল। বাঁশের তৈরি বর্শা আর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তিনি ও তাঁর যোদ্ধারা স্প্যানিশ বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। মাকতানের অগভীর পানিতে স্প্যানিশদের বড় জাহাজ ভিড়তে পারেনি, আর তাদের ভারী বর্ম পরে নড়াচড়া করাও কঠিন হয়ে পড়েছিল। ল্যাপু-ল্যাপুর কৌশলী আক্রমণে ম্যাগেলান নিহত হন এবং তার বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। এটি ছিল এশিয়ার বুকে কোনো স্থানীয় শাসকের হাতে ইউরোপীয় শক্তির প্রথম বড় পরাজয়।
আজকের ফিলিপাইনে ল্যাপু-ল্যাপু এক জাতীয় বীর। তাঁর স্মরণে মাকতানে বিশাল ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে। ফিলিপাইনের পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রতীকেও তাঁর ছবি ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আমরা যেমন আধুনিক পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা কৌশলে জয়ী হয়েছিলাম, ল্যাপু-ল্যাপুর এই বিজয়ও সেই একই সত্য প্রমাণ করে-অস্ত্রের চেয়ে সাহসের ধার অনেক বেশি। ২১ ডিসেম্বরের এই দিনে আমরা শ্রদ্ধা জানাই সেই সব আদি বীরদের, যারা পরাধীনতার শৃঙ্খল পরার আগেই তা ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিলেন।