মিয়ানমার থেকে আবারও সেন্ট মার্টিনগামী ট্রলার লক্ষ্য করে গুলি

গুলিবর্ষণের শিকার ট্রলার। আজ দুপুরে টেকনাফের নাফ নদীতেছবি : সংগৃহীত

টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে যাওয়া পথে একটি পণ্যবাহী ট্রলারে আবারও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে কোনো হতাহতের ঘটেনি। তবে ট্রলারটির বিভিন্ন স্থানে সাতটি গুলি লেগেছে বলে দাবি করেছেন ট্রলারের মালিক।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশি ট্রলারটিতে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) নাকি বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি গুলি চালিয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ঘটনাটি ঘটেছে নাফ নদীর বদরমোকাম মোহনায় নাইক্ষ্যংদিয়া নামক এলাকায়। প্রথম আলোকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন সেন্ট মার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি ও ওই ট্রলারের মালিক আবদুর রশিদ। তিনি বলেন, আজ বেলা ১১টায় টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালীয়া খাল থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী ভর্তি করে এসবি রাফিয়া চারজন মাঝিসহ সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে রওনা দেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ট্রলারটি টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথের বদরমোকাম এলাকায় পৌঁছালে মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে ট্রলারের দিকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়া হয়। তখন ট্রলারে থাকা অপর মাঝিমাল্লা শুয়ে পড়েন। এ সময় এসবি রাফিয়াকে লক্ষ্য করে ২০-৩০টি গুলি বর্ষণ করা হয়। পরে ট্রলারটির মাঝি(চালক) মোহাম্মদ বেলাল সেটি ঘুরিয়ে নিয়ে শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে নোঙর করেন।

ওই ট্রলারের মাঝি মোহাম্মদ বেলাল বলেন, গত বুধবার রাতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ থেকে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের স্থগিত কেন্দ্রের নির্বাচনী কর্মকর্তা ও সরঞ্জাম নিয়ে ফেরার সময় একই ট্রলার লক্ষ্য করে শতাধিক গুলিবর্ষণ করা হয়েছিল। ওই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি।

আজ পুনরায় ওই ট্রলারে পণ্য নিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার সময় মিয়ানমারের উপকূল থেকে ট্রলারে ২০ থেকে ৩০টি গুলি করা হয়। পরে ট্রলারটি নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে এনে নোঙর করা হয়েছে।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের প্রায় সাড়ে ১০ হাজার বাসিন্দা রয়েছেন। এর সঙ্গে দ্বীপের বিভিন্ন হোটেল-মোটেল আরও হাজার-দেড়েকসহ ১২ হাজার মানুষ বসবাস করছেন। এসব মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর একমাত্র জোগান টেকনাফ থেকে আসে। কয়েক দিন ধরে মিয়ানমারের সীমান্ত থেকে এই নৌপথে চলাচলকারী সার্ভিস ট্রলারকে লক্ষ্য করে গুলি করার ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেই আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। টেকনাফ থেকে আনা যাচ্ছে না ভিজিডি বা ভিজিডিএফের চালও। এর মধ্যে নৌযোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

ইউপির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান আরও বলেন, এ নৌপথে ট্রলার চলাচল স্বাভাবিক করতে ওই এলাকায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও বিজিবির টহল জোরদার করার জন্য সরকারের দৃষ্টি কামনা করেছেন।

এদিকে সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে টানা তিন মাস ধরে ক্ষমতাসীন জান্তা বাহিনীর সঙ্গে কয়েকটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘাত-লড়াই চলছে। সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে মংডু টাউনশিপের উত্তর ও দক্ষিণ দিকের বেশ কিছু এলাকা ইতিমধ্যে দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মির বিদ্রোহীরা। নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকাটিও কিছুদিন আগে আরাকান আর্মি দখলে নেয়। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশি ট্রলারটিতে আরাকান আর্মি গুলি ছুড়েছে।

টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গুলির বিষয়টি শুনেছি। সার্ভিস ট্রলারে গুলিবর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বিজিপির কাছে প্রতিবাদলিপি পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।’

এ ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন ধরে সাগর উত্তাল থাকায় দুদিন ধরে সেন্ট মার্টিনের সঙ্গে টেকনাফের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে মিয়ানমার থেকে সার্ভিস ট্রলার লক্ষ্য করে গুলির ঘটনায় ট্রলারমালিকদের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে বলা হয়েছে।