বজ্রপাতে শিশুমৃত্যু নতুন করে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে

বর্ষা মৌসুমের শুরু এবং শেষের দিকে বজ্রপাতে বেশি মৃত্যু হয়। এতে কর্মক্ষম পুরুষই বেশি মরে। গত কয়েক বছরে এই ধারাবাহিকতায় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। বাড়ছে শিশু ও নারীর মৃত্যু

দেশে বজ্রপাতে শিশু ও নারীর মৃত্যু বাড়ছেফাইল ছবি : রয়টার্স

দুই ভাই হাকিম (১০) আর সাকিব (৭) গত ২৬ এপ্রিল শিলাবৃষ্টির মধ্যে বাগানে আম কুড়াতে গিয়েছিল। সেখানে বজ্রপাতে সাকিব মারা যায়। আহত হাকিম এখনো বেঁচে আছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটের দলদলী ইউনিয়নে এই ঘটনার আগে ২১ এপ্রিল সিলেটের জৈন্তাপুরে একইভাবে মারা যায় ইমন, নাঈম আর আঞ্জুমা। নাঈম মামার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিল। মামাতো বোন আঞ্জুমার সঙ্গে সে আম কুড়াতে গিয়েছিল।
কবি জসীমউদ্‌দীন মামার বাড়ির সুখস্মৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছিলেন, ‘ঝড়ের দিনে মামার দেশে/ আম কুড়াতে সুখ/ পাকা জামের মধুর রসে/ রঙিন করি মুখ।’

শৈশবের সেই সুখের গুড়েও এখন বালুর আস্তরণ। গত কয়েক দিনে ঝড়ের মধ্যে আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে ১২–১৩ জন শিশুর প্রাণ গেছে। আহত মানুষের তালিকায়ও শিশুর সংখ্যা নেহাত কম নয়। ফাউন্ডেশন ফর ডিজাস্টার ফোরামের তথ্যমতে, গত বছর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বজ্রপাতে ৫১ শিশুর মৃত্যু হয়েছিল।

বৈশাখে ঝড় হবে, আমগাছ দুলে উঠবে। কাঁচা আম মাটিতে লুটিয়ে পড়বে। শিশুরা হুটোপুটি করে সেগুলো কুড়াবে, খাবে—এটাই স্বাভাবিক। এক বাগান থেকে আরেক বাগানে ছুটবে বালক–বালিকা। কেউ বলবে গানের ভাষায়, ‘বৃষ্টি ঝরা পথের ধারে আম কুড়াতে এসে/ ভেজা হাতে ডাকলও আমায় বল্ল ভালোবেসে/ এখানে আম কুড়ানোর ধুম লেগেছে/ চলনা অন্য কোথাও যাই’। খোলা গ্রামে বাগানঘেরা শহরে বেড়ে ওঠা প্রবীণদের স্মৃতিতে ঝড়ের দিনে আম কুড়ানোর স্মৃতি নিশ্চয় আছে। ঝড়–বৃষ্টিতে আম কুড়াতে গিয়ে পিছলে পড়া, হাত–পা ভাঙার দু–একটা স্মৃতি কারও কারও থাকলেও বাজ্রপাতে মৃত্যুর কথা কখনো শোনা যায়নি। এখন যাচ্ছে।

৮৪
দেশে প্রতিবছর গড়ে ৮৪ লাখ বজ্রপাত হয়, যার ৭০ শতাংশই হয়ে থাকে এপ্রিল থেকে জুনে। এটা বর্ষা শুরুর মৌসুম। বর্ষা শেষে অর্থাৎ মৌসুমি বায়ু ফেরত যাওয়ার সময় সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেও বজ্রপাত বাড়ে। দুটিই দেশে ফসল ঘরে তোলার মৌসুম

এবার ঝড়–বৃষ্টির মাস। ঝড়–বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতে মৃত্যুর খবর আসা শুরু হয়েছে।
গত ২৩ এপ্রিল দেশের পূর্বাঞ্চলের ছয় উপজেলায় এক দিনেই বজ্রপাতে ৯ জনের মৃত্যু হয়। এরপর ২৭ এপ্রিল ছয় জেলায় মারা যান আটজন। এখন প্রতিদিনই কেউ না কেউ বজ্রপাতের শিকার হচ্ছেন। যাঁরা এসব মৃত্যুর হিসাব রাখেন, তাঁরা বলছেন, ২০১৩ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দেশে বজ্রপাতে ১ হাজার ৮৭৮ জন মারা গেছেন। এঁদের ৭২ শতাংশই কৃষক। এযাবৎ পরিসংখ্যানে কেবল কর্মক্ষম পুরুষ মানুষের মৃত্যুর খবরই প্রাধান্য পেয়েছে। গত কয়েক বছরে এই ধারাবাহিকতায় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। শিশু ও নারীর মৃত্যুহার বাড়ছে।

কেন আগের চেয়ে বেশি শিশু মরছে

এখন পর্যন্ত কেবল ধারণার ওপর নির্ভর করে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে। ধারাবাহিক গবেষণা ছাড়া সঠিক উত্তর মেলা কঠিন। অনেকে মনে করেন, এখন আর বড় গাছ নেই। ছোট ছোট গাছেই আম ধরে। ফলে গাছের উচ্চতার কারণে আগে শিশুরা ব্রজপাত থেকে রক্ষা পেত, এখন আর সেটা হচ্ছে না। অনেকেই বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন। তাঁরা বলছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগের চেয়ে এখন বেশি বেশি বজ্রপাত হচ্ছে এবং এতে মানুষ মরছে বেশি।

মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে ১৩ শতাংশের বেশি মানুষ মারা যান। বজ্রপাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর যে ২০টি জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে, তার মধ্যে বজ্রপাতের সময় মাছ ধরা বন্ধ রাখার কথাও বলা আছে

তবে এই ধারণাকে তথ্য–উপাত্ত দিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। তাঁদের হিসাব বলছে, বজ্রপাতের পরিমাণ বাড়েনি। তাঁরা বলছেন, মানুষ বেড়েছে, বৈরী আবহাওয়ায় মানুষের সম্পৃক্ততা বেড়েছে। ১৯৭১ সালে যেখানে সাত কোটি মানুষ বসবাস করত, এখন সেখানে প্রায় তিন গুণ বেশি মানুষ বসবাস করছে।

বজ্রপাতের মৌসুম

অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ওপর গবেষণা চালিয়েছে। তারা বলছে, এ দেশে প্রতিবছর গড়ে ৮৪ লাখ বজ্রপাত হয়, যার ৭০ শতাংশই এপ্রিল থেকে জুনে হয়। এটা বর্ষা শুরুর মৌসুম। বর্ষা শেষে অর্থাৎ মৌসুমি বায়ু ফেরত যাওয়ার সময় সেপ্টেম্বর–অক্টোবরেও বজ্রপাত বাড়ে।

তবে তথ্য–উপাত্ত থেকে জানা যায়, বর্ষা শুরুর পর বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনা তুলনামূলক বেশি ঘটে। গত বছর বা তার আগের বছরগুলোর হিসাব ঘাঁটলে মোটামুটি একই ধারাবাহিকতা দেখা যায়। গত বছরের জুলাই পর্যন্ত বজ্রপাতে মারা যান ১৯২ জন (পুরুষ ১৩৩)। আর আগস্ট থেকে নভেম্বর/ডিসেম্বরে মারা যান ১২২ জন (পুরুষ ৯৯)। দুটিই আমাদের ফসল ঘরে তোলার মৌসুম। তাই বৃক্ষহীন ফসলের মাঠে অথবা ফসল নিয়ে ফেরার পথে নৌকায় বা ফসল মাড়াইয়ের সময় বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা বেশি। এসব কাজ প্রধানত কর্মঠ পুরুষের। তাই মৃত্যুর তালিকায় তারাই শীর্ষে।

দেশে সাধারণত বর্ষা মৌসুমের শুরু এবং শেষের দিকে বজ্রপাত বেশি হয়। কারওয়ান বাজার, ঢাকা
ফাইল ছবি

বজ্রপাতের অন্য ক্ষতি

বজ্রপাতে প্রাণহানির হিসাব–নিকাশ নিয়ে আমরা অনেক কথা বলি। কিন্তু অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তেমন একটা আমলে নিই না। শহর এলাকায় বজ্রপাতে হতাহতের ঘটনা নেই ঠিকই। তবে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়। যন্ত্রপাতি মেরামতের দোকানে এই মৌসুম খানিকটা ঈদের আমেজ চলে। ঝড়–বৃষ্টির সময় বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি যেমন ফ্রিজ, টেলিভিশন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ইত্যাদির সংযোগ বিছিন্ন রাখলে বিপত্তি এড়ানো সম্ভব। ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিস নষ্ট হলে মেরামত করতে সময় লাগে না। কিন্তু প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে সেবা প্রতিষ্ঠান, যেমন হাসপাতাল, টিকা/ওষুধ সংরক্ষণ কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি নষ্ট হলে মেরামত করতে অনেক সময় লাগে। এতে সম্পদ, বিশেষ করে প্রতিষেধক ও প্রাণ রক্ষাকারী ওষুধ নষ্ট হয়ে যায়।

বজ্রপাতে কী লাভ আছে

বিজ্ঞান বলছে, মাটিতে নাইট্রোজেন বা পরোক্ষভাবে প্রোটিনের উৎস হলো বজ্রপাত ও বৃষ্টির মাধ্যমে তৈরি নাইট্রিক অ্যাসিড। বজ্রপাতের সময় তড়িতের বিচ্ছুরণ ও উত্তাপের ফলে বায়ুর সংযুক্তিতে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে। এ সময় নাইট্রোজেন অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তৈরি হয় নাইট্রোজেন অক্সাইড। এই অক্সাইড পানির সংস্পর্শে পরিণত হয় অতি লঘু নাইট্রিক অ্যাসিডে। একেক অঞ্চলে বৃষ্টিতে অ্যাসিডের মাত্রা একেক রকম হয়। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যভাগে প্রতিবছর প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২ দশমিক ৫ টন অতি লঘু নাইট্রিক অ্যাসিড বৃষ্টির মাধ্যমে মাটিতে নেমে আসে। আমাদের উপমহাদেশ ও চীনে ৩ দশমিক ৫ টন, ভিয়েতনাম অঞ্চলে ৭ টন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যসম্পদ বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, এ সময় ঘন ঘন বজ্রপাত মাছের প্রজননে সহায়তা করে। বজ্রপাতের কারণে মাছের পিটিউটরি গ্ল্যান্ডে (পিজি) হরমোন নিঃসরণ শুরু হয়। প্রজনন সহায়ক এই নিঃসরণ মাছকে বেপরোয়া করে তোলে, তারা দৃশমান হয়। এ সময় মাছশিকারিরা একটু লোভ সংবরণ করলে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু কমার সঙ্গে সঙ্গে মাছের প্রজনন অনেকটা নির্বিঘ্ন হতো।

আরও পড়ুন

ফিনল্যান্ডভিত্তিক বজ্রপাতবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ভাইসালের তথ্য অনুযায়ী, মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে ১৩ শতাংশের বেশি মানুষ মারা যান। বজ্রপাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর যে ২০টি জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে, তার মধ্যে বজ্রপাতের সময় মাছ ধরা বন্ধ রাখার কথাও বলা আছে। এতে যে শুধু মানুষের জীবন বাঁচবে তা নয়, মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধির কাজটি ত্বরান্বিত হবে। জরুরি নির্দেশনার মধ্যে শিশুদের ঝড়ের সময় বাইরে না যাওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

আর কী করলে বাঁচবে প্রাণ

আজকাল বিজ্ঞানীরা মাঠে থাকা একেবারে নিরুপায় কৃষকদের জন্য বিভিন্ন থাম্প রুল মেনে চলার কথা বলছেন। এগুলো অনুমাননির্ভর নয়, বরং বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে। তবে সব সময় সব ক্ষেত্রে যে সমানভাবে কাজ করবে, সেটা বলা যাবে না। এরপরও সেগুলো আমলে নিয়ে চর্চায় রাখতে হবে।
বজ্রপাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ২০টি জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে। সেগুলো হচ্ছে—
১. বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির ধাতব রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না।
২. প্রতিটি ভবনে বজ্রনিরোধক দণ্ড স্থাপন নিশ্চিত করুন।
৩. খোলা স্থানে অনেকে একত্রে থাকার সময় বজ্রপাত শুরু হলে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে সরে যান।
৪. কোনো বাড়িতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা কক্ষে যান।

এপ্রিল-জুনে বজ্রপাত বেশি হয়। এ সময় আকাশে মেঘ দেখা গেলে ঘরে অবস্থান করতে হবে
ফাইল ছবি

৫. খোলা জায়গায় কোনো বড় গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়া যাবে না। গাছ থেকে চার মিটার দূরে থাকতে হবে।
৬. ছেঁড়া বৈদ্যুতিক তার থেকে দূরে থাকতে হবে। বৈদ্যুতিক তারের নিচ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে।
৭. ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির প্লাগগুলো লাইন থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে।
৮. বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিদের বৈদ্যুতিক শকের মতো করেই চিকিৎসা দিতে হবে।
৯. এপ্রিল-জুনে বজ্রপাত বেশি হয়। এ সময় আকাশে মেঘ দেখা গেলে ঘরে অবস্থান করুন।
১০. যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন।
১১. বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি বা বারান্দায় থাকবেন না এবং ঘরের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকুন।
১২. ঘন কালো মেঘ দেখা গেলে অতি জরুরি প্রয়োজনে রাবারের জুতা পরে বাইরে বের হতে পারেন।
১৩. উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, তার, ধাতব খুঁটি ও মোবাইল টাওয়ার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন।

আর তালগাছ নয়, এখন আমরা লাইটিনিং অ্যারেস্টারসহ লাইটিনিং শেল্টার এবং আর্লি ওয়ার্নিং ফর লাইটিনিং, সাইক্লোন অ্যান্ড ফ্লাড-শেল্টার গড়ে তুলব
এনামুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী


১৪. বজ্রপাতের সময় জরুরি প্রয়োজনে প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করুন।
১৫. খোলা জায়গা, মাঠ বা উঁচু স্থানে থাকবেন না।
১৬. কালো মেঘ দেখা দিলে নদী, পুকুর, ডোবা, জলাশয় থেকে দূরে থাকুন।
১৭. বজ্রপাতের সময় শিশুদের খোলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখুন এবং নিজেরাও বিরত থাকুন।
১৮. খোলা মাঠে থাকলে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে পড়ুন।
১৯. গাড়ির মধ্যে অবস্থান করলে, গাড়ির ধাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযোগ ঘটাবেন না। সম্ভব হলে গাড়িটি নিয়ে কংক্রিটের কোনো ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন।
২০. মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করুন।

বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে করণীয়

অনেক খরচাপাতির পর আমরা বুঝতে পেরেছি, তালগাছ প্রকল্প কোনো ফলদায়ক ছিল না। এখন এই প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। আমরা বুঝতে পেরেছি, তালগাছের রক্ষণাবেক্ষণ লাগে। তা ছাড়া এগুলো বড় হয়ে মানুষের চেয়ে উঁচু হতে ২০-৩০ বছর সময় লেগে যায়। তালগাছ লাগানোর কথা বললেও আমরা তালগাছ কাটা বন্ধের কথা বলিনি। তালের ডুঙ্গার হাট এখনো অবাধে চলছে নড়াইলসহ দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন বাজারে। আগামী বর্ষার আগেই হাজার দশেক তালগাছ কুড়ালের আঘতে শুয়ে পড়বে।

বজ্রপাত থেকে বাঁচতে সচেতনতা বাড়াতে হবে
ফাইল ছবি

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেছেন, ‘আর তালগাছ নয়, এখন আমরা লাইটিনিং অ্যারেস্টারসহ লাইটিনিং শেল্টার এবং আর্লি ওয়ার্নিং ফর লাইটিনিং, সাইক্লোন অ্যান্ড ফ্লাড-শেল্টার গড়ে তুলব।’

এই প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে বজ্রপাতপ্রবণ ১৫টি জেলায় লাইটিনিং অ্যারেস্টার স্থাপনের কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে আরও বজ্রপাতপ্রবণ জেলায় এগুলো বসানো হবে। কৃষককে বজ্রপাত থেকে রক্ষা করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ও নানা স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসছে। তবে আমরা যা কিছু করি, তালগাছের মতো তাড়াহুড়া না করে মানুষকে আর বিজ্ঞানকে সঙ্গে নিয়েই করতে হবে। মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার বিলাসিতা আমাদের জন্য নয়।


* গওহার নঈম ওয়ারা: লেখক ও গবেষক
ই–মেইল: [email protected]