শিশুর জন্মে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার রোধে সর্বস্তরে নীতিমালা প্রচারের নির্দেশ

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

শিশুর জন্মে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার (সিজারিয়ান অপারেশন) রোধে তৈরি করা নীতিমালাটি ছয় মাসের মধ্যে সর্বস্তরে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। চার বছর আগে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।

ওই নীতিমালায় চিকিৎসকদের নৈতিক মানদণ্ড বাড়ানোর লক্ষ্যে নিয়মিত কাউন্সেলিং ও প্রশিক্ষণ দেওয়া; তথ্য সংরক্ষণ ও রেকর্ডিংয়ের দায়বদ্ধতা ও তদারকি; স্বেচ্ছায় অস্ত্রোপচার বেছে নেওয়া নারীর ক্ষেত্রে তাঁকে সবকিছু জানিয়ে তাঁর সম্মতি নিতে হবে, অন্যথায় অসম্পূর্ণ বা ভুল তথ্য প্রদানের মাধ্যমে আদায় করা সম্মতি আইনের দৃষ্টিতে কোনো ধরনের গ্রহণযোগ্যতা পাবে না, তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রচারমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করার বিষয়গুলো রয়েছে।

শিশুর জন্মে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার রোধে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, চিকিৎসক, নার্স ও ধাত্রীদের জন্য নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ২০১৯ সালের ২৯ জুন ওই রিট করে। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ৩০ জুন হাইকোর্ট রুল দিয়ে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার রোধে নীতিমালা করতে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের নিয়ে ওই কমিটি গঠন করতে বলা হয়। পরে কমিটির তৈরি নীতিমালা আদালতে দাখিল করা হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল নিষ্পত্তি করে আজ রায় দেওয়া হয়।  

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রাশনা ইমাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী কাজী এরশাদুল আলম।

রায়ের পর আইনজীবী রাশনা ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৯ সালে যখন রিটটি করা হয়, তখন অস্ত্রোপচারের (সি-সেকশন) মাধ্যমে দেশে সন্তান জন্মদানের হার ৩১ শতাংশ ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভাষ্যমতে, একটি দেশে সিজারিয়ান অপারেশনের (সি-সেকশন) হার কোনোভাবেই ১০ থেকে ১৫ শতাংশের বেশি হওয়ার যৌক্তিকতা নেই। এখন সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের হার বেড়ে ৪৫ শতাংশ হয়েছে। উদ্বেগজনকভাবে এই যে হারটা বাড়ছে, তা রোধে এবং নারীর প্রজননস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ওই রিট করা হয়।

হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত কমিটি ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নীতিমালাটি আদালতে দাখিল করে বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নীতিমালাটি রায়ের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট। এই নীতিমালা অনুসরণের মাধ্যমে স্বাভাবিক প্রসব নিশ্চিত এবং অপ্রয়োজনীয় সি-সেকশন রোধ করা যাবে। স্বাভাবিক প্রসবে ব্যাপক প্রচার ও অপ্রয়োজনীয় সি-সেকশন রোধে নীতিমালাটি ছয় মাসের মধ্যে সর্বস্তরে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।