শহীদ আহনাফের নামে গ্রন্থাগার

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট রাজধানীর মিরপুর–১০ নম্বরে গুলিতে নিহত হয় আহনাফ। সে বিএএফ শাহীন কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলছবি: প্রথম আলো

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ শাফিক উদ্দিন আহমেদ আহনাফের নামে একটি গ্রন্থাগার করেছে রাজধানীর মিরপুরের মডেল একাডেমি স্কুল। নাম দেওয়া হয়েছে ‘বীর শহীদ আহনাফ গ্রন্থাগার’। আজ শনিবার গ্রন্থাগারটির উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একেবারে শেষ দিকে, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট রাজধানীর মিরপুর–১০ নম্বরে গুলিতে নিহত হয় আহনাফ। সে বিএএফ শাহীন কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তার বয়স ছিল ১৭ বছর। মিরপুরের মডেল একাডেমি স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল আহনাফ।

গ্রন্থাগার উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আহনাফের আত্মত্যাগ তাৎক্ষণিকভাবে জুলাই আন্দোলনের গতি ত্বরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে তার অবদান অপরিসীম। সে তার মাকে বলত, “মা, দেখো, একদিন আমি এমন কিছু করব, তোমরা আমার জন্য গর্বিত হবে।” বাস্তবে সে শুধু তার মা বা পরিবার নয়, পুরো বাংলাদেশকেই গর্বিত করেছে।’

শহীদ আহনাফের নামে গ্রন্থাগারের নামকরণ করায় স্কুল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের একজন আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আহনাফের মতো যাঁরা গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য যে প্রেরণা নিয়ে জীবন দিয়ে গেছেন, সেই নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য আপনারা কাজ করবেন। নিজেদের যোগ্য করে তুলবেন।’

গ্রন্থাগার কেন, কোনো কিছুর মাধ্যমেই জুলাই শহীদদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন মডেল একাডেমি স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. নাসির উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘তা সত্ত্বেও আমরা শহীদদের স্মরণে কিছু করার চেষ্টা করছি। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের কৃতী সন্তান শহীদ আহনাফের নামে গ্রন্থাগার উদ্বোধন করা হলো।’

ছেলের নামে করা গ্রন্থাগার উদ্বোধনে ছিলেন শহীদ আহনাফের মা সাফাত সিদ্দিকী ও বাবা নাসির উদ্দিন। আহনাফের নামে একটি গ্রন্থাগার করায় স্কুল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান তাঁরা। শহীদ প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নামে তাঁদের স্কুলে গ্রন্থাগার করার আহ্বান জানান আহনাফের মা।

সাফাত সিদ্দিকী বলেন, ‘আহনাফ এই স্কুলেরই স্টুডেন্ট (শিক্ষার্থী) ছিল। ক্লাস ফোর (চতুর্থ শ্রেণি) থেকে এই স্কুলে পড়েছে। এই স্কুলের অনেক স্মৃতি আছে আহনাফের। আজ শিক্ষকেরা তার নামে এই গ্রন্থাগার করেছেন। সে যে সাহসিকতা দেখিয়ে বীরের মতো কাজ করেছে, স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে যেভাবে প্রাণ দিয়েছে, এটা যেন আগামী প্রজন্ম ভুলে না যায়।’

আহনাফের বাবা বলেন, ‘আজ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ আমার ছেলের নামে লাইব্রেরি উদ্বোধন করেছে। আমরা খুশি তারা আমাদের ছেলেকে মনে রেখেছে।’ মডেল একাডেমি নামের স্কুলটি যাতে বীর শহীদ আহমেদ মডেল একাডেমি স্কুল ও সরকারীকরণ করা হয়, সেই দাবি জানান তিনি।

গ্রন্থাগারে বিভিন্ন বইয়ের পাশাপাশি জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে বই দেখা যায়। স্কুলের ভরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমির হোসেন বলেন, ‘আহনাফ আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল। তাকে সবার কাছে স্মরণীয় করে রাখতে আমরা বীর শহীদ আহনাফ গ্রন্থাগার নামে লাইব্রেরির নাম ঠিক করলাম, যাতে লাইব্রেরিতে আসা শিক্ষার্থীরা শহীদদের স্মরণে রাখতে পারে।’