মাইলস্টোনে কাউন্সেলিং নিচ্ছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা

কাউন্সেলিং সেন্টারের সামনে শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা। রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে। ২৯ জুলাই ২০২৫ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় যেসব শিক্ষার্থী মানসিক ট্রমায় ভুগছে, তাদের কাউন্সেলিং সেন্টারে নিয়ে আসছেন অভিভাবকেরা। উদ্দেশ্য, এই শিক্ষার্থীদের মানসিক ট্রমা থেকে বের করে আনা। পড়ালেখায় মনোযোগী করা। আবার যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা কাছ থেকে দেখা অভিভাবকেরা কাউন্সেলিং নিচ্ছেন।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা গেছে।

গত ২১ জুলাই এই ক্যাম্পাসে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটে। গতকাল সোমবার রাত ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো তথ্য বলছে, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৫ জন ভর্তি ছিলেন।

ভয়াবহ এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মাইলস্টোনের এই ক্যাম্পাসে পৃথক তিনটি ভবনে কাউন্সেলিং দেওয়া হচ্ছে। বিমানবাহিনী ও ব্র্যাকের মনোরোগবিশেষজ্ঞরা শিক্ষার্থী, অভিভাবক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই সেবা দিচ্ছেন। ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী স্থাপিত অস্থায়ী চিকিৎসা ক্যাম্পে চিকিৎসাসেবার কার্যক্রমও চলছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী দেবস্মিতা রায়কে নিয়ে কাউন্সেলিং সেন্টারে এসেছিলেন বাবা মনোজ রায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের দিন তাঁর মেয়ে ক্যাম্পাসে ছিল। চোখের সামনেই মর্মান্তিক এই ঘটনা দেখে সে ট্রমায় ভুগছে। এখন মেঘের গর্জন শুনলেও ভীষণ ভয় পাচ্ছে। আতঙ্কিত হয়ে যাচ্ছে। তাই তাঁকে স্বাভাবিক করতে কাউন্সেলিং সেন্টারে নিয়ে এসেছেন।

কাউন্সেলিং নেওয়ার পর দেবস্মিতা রায় জানায়, ভয় না পেতে তাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ‘ডিপ ব্রেদিং’-এর একটি ব্যায়াম শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন
যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের জায়গাটি দেখতে এসেছেন অনেকে। রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে। ২৯ জুলাই ২০২৫
ছবি: প্রথম আলো

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী অভ্র সাধু এখন পর্যন্ত কথা বলতে পারছে না বলে জানান মা সুস্মিতা সাধু। কাউন্সেলিং সেন্টারের সামনে অপেক্ষা করার সময় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে সন্তানকে নিয়ে এসেছেন।

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের জায়গাটি দেখতে এখনো মাইলস্টোন ক্যাম্পাসে আসছেন অনেকে। অভিভাবক জেসমিন বেগম বললেন, তাঁর সন্তান ভীষণ আতঙ্কিত। সে বলেছে, ক্যাম্পাসের ভেতরে সে আর ঢুকবে না। তাই তিনি নিজে পরিস্থিতি দেখার জন্য ঘটনাস্থলে এসেছেন।

ঘটনার দিন ঘটনাস্থলের পাশেই ছিলেন জানিয়ে এই অভিভাবক বলেন, এভাবে সন্তানদের মৃত্যু তিনি মেনে নিতে পারছেন না। সেদিনের হৃদয়বিদারক ঘটনা মাথা থেকে বাদ দিতে চেষ্টা করছেন তিনি।

আরও পড়ুন

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের পর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ আছে। তবে কাউন্সেলিং ও চিকিৎসা নিতে আসা শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সঙ্গে দেখা করতে কয়েকজন শিক্ষক ক্যাম্পাসে এসেছেন।

স্কুল শাখার গণিতের শিক্ষক আবু জাফর বলেন, অপ্রত্যাশিত এ ঘটনায় সহপাঠীদের হারিয়ে এখনো ব্যথাতুর হয়ে আছে শিক্ষার্থীরা। তাই তিনি শিক্ষার্থীদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার ওয়ালিউল্লাহ খান প্রথম আলোকে বলেন, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে আজ কাউন্সেলিং সেন্টারে সেবা নিতে এসেছে। বিমানবাহিনীর বিশেষজ্ঞরা শিক্ষার্থীদের সেবা দিচ্ছেন।

ক্যাম্পাসে এসে অনেক শিক্ষার্থী পরিচিত বন্ধুদের দেখা পেয়ে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। পরস্পরের সঙ্গে কথা বলে। ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর ডান দিকের একতলা ভবনের একটি কক্ষে আহত ও নিহত শিক্ষার্থীদের স্কুলব্যাগ রাখা হয়েছে। প্রতিটি ব্যাগে সাদা কাগজে শিক্ষার্থীর নাম-পরিচয় লিখে রাখা হয়েছে। অনেকে এসে সেসব ব্যাগ দেখে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন